ভারতীয় নারীর হাতে দিনেদুপুরে ‘বাংলাদেশি’ যুবক খুন

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বসিরহাটের খোলাপোতা মোড়ে দিনের বেলা প্রকাশ্যে আসিফ গাজী নামের ৩৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে খুন করেছেন একজন গৃহবধু। কোমরে লুকানো ছুরি দিয়ে সবার সামনেই কোপাতে শুরু করেন মারুফা বিবি (৩৫) নামের ওই নারী। একটু পরে সেখানেই মারা যান আসিফ।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, নিহত ওই ব্যক্তি মূলত বাংলাদেশের নাগরিক। সে ভারতে একটি মাছের আড়তে কাজ করতো। এ খুনের ঘটনার পরপরই এলাকার লোকজন মারুফা, তার স্বামী আজিজুল দফাদার ও তার এক বন্ধুকে ধরে বেধড়ক পিটুনী দেয়। পরে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। নিহত আসিফ গাজীকে বাংলাদেশি দাবি করা হলেও তিনি কয়েক বছর ধরে ভারতে কিভাবে বসবাস করতেন তা বিস্তারিত ভাবে জানায়নি দেশটির গণমাধ্যমগুলো।

মঙ্গলবার, ২৫ জুন সকালের দিকে এ ঘটনা ঘটে। মারুফা বিবির বাড়ি মাটিয়া থানার ঝুরুলি গ্রামে। তার স্বামী কলকাতায় একটি হোটেলে রান্নার কাজ করেন। ওই দম্পত্তির দুটি সন্তান রয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইনের খবরে বলা হয়, মারুফা মঙ্গলবার সকালে সন্তান কোলে নিয়ে একাই বাড়ি থেকে বের  হন। এরপর তার স্বামী ও তার বন্ধুসহ তিন জনেই একটি বাইকে খোলাপোতা মোড়ে আসেন। সেখানেই আসিফকে সেখানে ফোন করে ডেকে নেন তারা। আসিফ মোটরবাইকে আসতেই সন্তানকে কোলে নিয়ে তার কাছে গিয়ে কথা বলতে শুরু করেন ওই নারী। এর কিছুটা দূরেই বাইকে তার স্বামী ও তার বন্ধু বসে ছিলেন।

আসিফের সাথে কথা বলতে বলতে প্রথমে কয়েকটা চড়-থাপ্পড়ের পরেই কোমরে গুঁজে রাখা ছুরি বের করে গলায় বেশ কয়েকটি কোপ দেন। একসময় মোটরসাইকেল থেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আসিফ।

ঘটনা  দেখে ছুটে আসেন আশপাশের দোকানদার এবং পথচারিরা। তাঁরা আসিফকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে করতে সেখানেই মারা যান আসিফ।

নিউজ এইটিন বাংলার খবরে বলা হয়, এ ঘটনার পর বাইকে স্বামীর সাথে পালানোর চেষ্টা করেন মারুফা। কিন্তু স্থানীয়রা তাদের আটকে মারধর করতে শুরু করেন। ভিডিওতে দেখা যায়, মারুফার স্বামী ও তার বন্ধুকে আটকে ক্ষুদ্ধ লোকজন বেশ মারপিট করছেন। পরে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

কেন এমন ভয়ঙ্কর রূপে মারুফা?

মারুফার পরিবারের লোকজনের উদ্ধৃতি দিয়ে আনন্দবাজার বলছে, স্বামী বাইরে থাকার সুযোগ নিয়ে ওই যুবক মহিলাকে উত্ত্যক্ত করত। কুপ্রস্তাব দেওয়া থেকে ফোনে হুমকি, সংসার ছেড়ে তাঁর সঙ্গে পালানোর জন্য চাপ দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে ওই যুবকের বিরুদ্ধে। এমনকি শারীরিক সম্পর্কের জন্য জোর করাও হয়েছিল।

পুলিশের ধারণা, সেই প্রতিহিংসা থেকেই মহিলা এরকম প্রকাশ্য রাস্তায় খুনের পথ বেছে নেন। যদিও আসিফের সঙ্গে বিয়ের আগে সম্পর্ক থাকতে পারে বা বিয়ের পরে কোনও সম্পর্ক গড়ে ওঠার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারী অফিসাররা। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত শুরু হয়েছে। সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

মারুফার শাশুড়ি বলেন, ‘ছেলে-বউমা আমাদের সঙ্গে থাকে না। ওরা কাছেই আলাদা বাড়ি ভাড়া করে থাকে। ছেলে বাইরে থাকে বলে আসিফ বউমার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করে। নানা ভাবে বিরক্ত করত। আমার ছেলেকে ছেড়ে ওকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিত।’

আসিফকে নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেও ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকত। সোমবার রাতেও দু’জনের মধ্যে এ নিয়ে বাকবিতণ্ডা চলে বলে প্রতিবেশীরা আনন্দবাজারের প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।

এদিকে নিউজ এইটিন বাংলার খবরে বলা হয়েছে, বিগত কয়েক বছর ধরে আসিফ থাকত  ঝুরুলিতে । স্বামীর অনুপস্থিতিতে আসিফ বারবার বিরক্ত করত মারুফাকে। 

মারুফার শ্বাশুড়ির অভিযোগ, স্বামীর অনুপস্থিতিতে মারুফাকে ধর্ষণ করে আশিফ। এমনকি স্বামী সন্তান সহ খুনেরও হুমকি দেয়।  তারই বদলা নিতে এই খুন কিনা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। 

এইচএ/রাতদিন