করোনার চলমান দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারতে ইতোমধ্যে এ রোগের তৃতীয় ঢেউ আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। চলতি বছর অক্টোবর নাগাদ দেখা দিতে পারে এই দুর্যোগ। এর ফলে, আগামী ২০২২ সালেও মহামারি পরিস্থিতির বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে দেশটিকে।
সম্প্রতি ভারতের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে একটি সমীক্ষা চালিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। এই জরিপে অংশ নিয়েছেন বিশ্বের শীর্ষ ৪০ জন স্বাস্থ্যসেবা বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, জীবাণুবিদ ও মহামারিবিদ। তারা প্রায় সবাই এ বিষয়ে একমত হয়েছেন- আগামী অক্টোবরে ভারতে ফের করোনা সংক্রমণের উল্লফন ঘটার ঝুঁকি আছে।
রয়টার্সের সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ২১-২৪ জন বিশেষজ্ঞ (শতকরা হিসেবে ৮৫ শতাংশের বেশি) জানিয়েছেন, অক্টোবরে ভারতের করোনার তৃতীয় ঢেউ দেখা দেবে। তাদের মধ্যে তিন জন জানিয়েছেন- অক্টোবর নয়, তার আগেই আগস্টের শেষে বা সেপ্টেম্বরের দিকে আসবে এই ঢেউ।
তবে পাশাপাশি তারা আশা প্রকাশ করেছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ-মৃত্যুতে ভারতে যে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে, তৃতীয় ঢেউয়ে তা ঘটার সম্ভাবনা কম। গত দু’মাস ধরে করোনায় দৈনিক আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকায় বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে আছে ভারত।
সমীক্ষায় অংশ নেয়া ভারতের চিকিৎসা গবেষণা বিষয়ক সর্বোচ্চ সরকারি সংস্থা অল ইন্ডিয়া অ্যাসোসিয়েশন অব মেডিকেল সায়েন্স (এআইআইএমস)- এর পরিচালক অমিত গুলেরিয়া রয়টার্সকে বলেন, ‘তৃতীয় ঢেউ দ্বিতীয়টির তুলনায় কম বিপর্যয়কর হবে। কারণ, ওই দুর্যোগ আসার আগে একদিকে দেশে টিকা নেওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়বে; অন্যদিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যারা সামাল দিতে পেরেছেন, তাদের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে।’
চলতি বছর ১৬ জানুয়ারি থেকে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে ভারতে। তবে সেই কর্মসূচির চিত্র আশাব্যাঞ্জক নয়। দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে টিকা নিতে পারেন- এমন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সংখ্যা ৯৫ কোটিরও বেশি, কিন্তু এখন পর্যন্ত দেশের প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার মাত্র ৫ শতাংশকে টিকার আওতায় আনা গেছে।
এই অবস্থায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে টিকাদান কর্মসূচির গতি বাড়ানো এবং সময়ের আগেই করোনা বিধিনিষেধ না তোলার পরামর্শ দিয়েছেন সমীক্ষায় অংশ নেওয়া বিশেজ্ঞরা। পাশাপাশি তারা আরও বলেছেন, আসন্ন তৃতীয় ঢেউয়ে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে শিশু ও আঠারো বছরের কম বয়সীরা।
ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরোসায়েন্স (এনআইএমএইচএএনএস)- এর মাহামারিবিদ্যা বিভাগের প্রধান ডা. প্রদীপ বানাদুর রয়টার্সকে বলেন, ‘পর্যন্ত ভারতের শিশু ও অপ্রাপ্তবয়স্করা এখন সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে। কারণ এখন পর্যন্ত তাদের জন্য উপযোগী কোনো টিকা দেশে নেই।’
বিশ্বখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেবি শেঠি এ বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের পূর্বপ্রস্তুতি থাকা উচিত। যদি শিশু ও অপ্রাপ্তবয়স্করা ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হয় সেক্ষেত্রে পূর্বপ্রস্তুতি না থাকলে মহাবিপর্যয় দেখা দেবে। কারণ, এখন পর্যন্ত ভারতে শিশুদের জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের সংখ্যা খুবই, খুবই কম।’
সূত্র: রয়টার্স
এনএ/রাতদিন