ভয়াল গ্রেনেড হামলার দেড় দশক আজ

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা ইতিহাসের এক কলঙ্কিত অধ্যায়। এর পর আরেকটি রক্তাক্ত ও কলঙ্কিত অধ্যায়ের সূচিত হয় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। আজ বুধবার, ২১ আগস্ট সেই ভয়াল ও রক্তাক্ত গ্রেনেড হামলার দেড় দশক হতে চলেছে।

এদিন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী শান্তিপূর্ণ সমাবেশের ওপর গ্রেনেড হামালা চালানো হয়।

এই বর্বরোচিত হামলার প্রধান টার্গেট ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তত্কালীন বিরোধী দলের নেতা আওয়ামী লীগ সভাপতি কন্যা শেখ হাসিনা। এতে মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন শেখ হাসিনাসহ ৫ শতাধিক মানুষ।

সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলা এবং তত্কালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের নির্যাতন-নিপীড়নের প্রতিবাদে ওইদিন বিকেলে এই সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ ও শোভাযাত্রার আয়োজন করে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই সমাবেশে খোলা ট্রাকের ওপর স্থাপিত উন্মুক্ত মঞ্চে বক্তৃতা করেন শেখ হাসিনা।

বক্তৃতা শেষে ৫টা ২২ মিনিট, শেখ হাসিনা সন্ত্রাসবিরোধী শোভাযাত্রার উদ্বোধন ঘোষণা করেন, ঠিক সেই মুহূর্তেই অর্তকিতে গ্রেনেড বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোটা বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, গুলিস্তান, পুরানা পল্টন ও এর আশপাশের এলাকা।

চারদিক থেকে সভাস্থলে গ্রেনেড এসে পড়তে থাকে। মহূর্তের মধ্যে সমাবেশস্থল রক্তাক্ত হয়ে পড়ে, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ পরিণত হয় মৃত্যুর জনপদে। শত শত মানুষের আর্তচিত্কার, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকা ছিন্নভিন্ন দেহ, রক্ত আর বারুদের পোড়া গন্ধে পুরো এলাকাজুড়ে বীভৎস পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

এ সময় সেখানে দায়িত্ব পালনরত পুলিশ আহতদের সাহায্য করার পরিবর্তে ভীত-সন্ত্রস্ত এবং আহত মানুষের ওপর বেপরোয়া লাঠিচার্জ ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে।

শেখ হাসিনা সেই গ্রেনেড হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে গেলেও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি (দলের তত্কালীন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য) মো. জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী ও আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক রহমানসহ ২৪ জন প্রাণ হারান।

গ্রেনেড বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দে শেখ হাসিনার কানের শ্রবণশক্তি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গ্রেনেড হামলায় ২৩ জন ঘটনাস্থলেই মারা যান। গুরুতর আহত অবস্থায় আইভি রহমান সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে ২৪ আগস্ট শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

গ্রেনেড বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাকে রক্ষা করার জন্য ট্রাকের ওপর মানববর্ম রচনা করেছিলেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এই হত্যাযজ্ঞ থেকে দলের নেত্রীকে বাঁচাতে নেতাকর্মীরা মানববর্ম দিয়ে আড়াল করে তাকে দ্রুত গাড়িতে তুলে দেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ থেকে বের হওয়ার পথেই শেখ হাসিনার বুলেট প্রুফ মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়িতেও ঘাতকরা অবিরাম গুলিবর্ষণ করে।

২১ আগস্টের এই গ্রেনেড হামলায় যারা নিহত হন, তারা হলেন-মোস্তাক আহমেদ সেন্টু, ল্যান্স কর্পোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, রফিকুল ইসলাম আদা চাচা, সুফিয়া বেগম, হাসিনা মমতাজ রীনা, লিটন মুন্সী ওরফে লিটু, রতন সিকদার, মো. হানিফ ওরফে মুক্তিযোদ্ধা হানিফ, মামুন মৃধা, বেলাল হোসেন, আমিনুল ইসলাম, আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারী, আতিক সরকার, নাসিরউদ্দিন সরদার, রেজিয়া বেগম, আবুল কাসেম, জাহেদ আলী, মমিন আলী, শামসুদ্দিন, আবুল কালাম আজাদ, ইছহাক মিয়া এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরো দুজন।

আহতের মধ্যে ছিলেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি (দলের তত্কালীন সভাপতিমন্ডলীর সদস্য) জিল্লুর রহমান, তৎকালীন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথসহ দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী।

দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিয়ে আহতদের অনেকে সুস্থ হলেও অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করে বেঁচে আছেন।