প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে যমুনা নদীর উপর ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু’ নির্মাণের ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এই রেলসেতু নির্মিত হলে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোর সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ হবে বলে মনে করছে সরকার।
বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি সচিবালয়ের সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব কথা সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন। ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্পসহ মোট ৯টি ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়।
এসব প্রকল্পে ব্যয় হবে ১৪ হাজার ১১ কোটি ৮০ লাখ ৪২ হাজার টাকা। এরমধ্যে ১২ হাজার ৯৫০ কোটি ৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৬৭ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণে।
অনুমোদিত প্রকল্পের বিভিন্ন দিক সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ হচ্ছে। এটি বর্তমান সরকারের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আর একটি নতুন মাইলফলক হবে।
দুটি প্যাকেজে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১২ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা ৬ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। এই প্রকল্পে জাইকা আর্থিক সহায়তা দেবে। প্রকল্পটি আগামী ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণে ২০১৬ সালে প্রকল্প অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
জাপান ভিত্তিক দুই প্রতিষ্ঠান ডব্লিউডি-১ ওটিজে জয়েন্ট ভেঞ্চার এবং ডব্লিউডি-২ প্যাকেজে আইএইচআই এসএমসিসি জয়েন্ট ভেঞ্চার সর্ব নিম্ন দরদাতা হিসেবে বাংলাদেশ রেলওয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।
প্রসঙ্গত, প্রকল্পটি ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। যমুনা নদীর উপর বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু বাংলাদেশের একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সেতু। যা, দেশের পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলকে সংযুক্ত করেছে। সেতুটি আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কেও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত। ভারত, মিয়ানার, ভূটান ও নেপালসহ উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগের কেন্দ্রে রয়েছে বাংলাদেশ।
এদিকে, বৈঠকে অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুলো হলো-ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) এবং বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে অনুমোদিত ‘বহুমূখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র। প্রকল্পের আওতায় পটুয়াখালী জেলায় ৩৬টি সাইক্লোন শেল্টার ও তৎসংলগ্ন সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজের প্যাকেজ নং-এনডব্লিউ-০৫ এর ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ২৪ কোটি ৩২ লাখ ৯৪ হাজার ৪৯৪ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে দ্যা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড ও নবারুন ট্রেডার্স লিমিটেড। একই প্রকল্পের আওতায় (প্যাকেজ নং-এনডব্লিউ-০৭) পিরোজপুরে ৫০টি সাইক্লান সেন্টার তৈরি করবে রাফিয়া কন্সস্ট্রাকশন লিমিটেড ও মেসার্স এসবি ট্রেডার্স। এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৩১৯ কোটি ৫০ লাখ ১৩ হাজার ৯৫০ টাকা।
এছাড়া আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রজেক্ট, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের বিদ্যুায়নের জন্য বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলাধীন জগন্নাথকাঠি চান্দকাঠি জিসি সড়কে কালিগঙ্গা নদীর উপর ৬০০ মিটার ব্রিজ নির্মাণ, চট্টগ্রাম জেলায় ২৫টি সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এদিকে, সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, যেসব সম্পদ এখনো ব্যবহার করতে পারিনি সেগুলো ব্যবহার করতে পারলে আমাদের প্রবৃদ্ধি আরও ভাল হবে। সবার জন্য আকর্ষণীয় হবে। যেটাকে আমরা বলি ইনক্লুসিভ গ্রোথ। তিনি বলেন, সেকাজগুলো করার জন্য আগামী ৫ বছর প্রত্যেকটি প্রান্তিক পরিবারকে নিবেদন করবো। প্রান্তিক পরিবারগুলো হবে আমাদের অগ্রাধিকার। এখন রাস্তা-ঘাট যেরকম অগ্রাধিকার পাচ্ছে তার চেয়েও বেশি অগ্রাধিকার পাবে প্রান্তিক পরিবার। সুত্র: জনকন্ঠ
এসকে/রাতদিন