আলোচিত ফেনীর সোনাগাজী সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন রোববার, ১৬ জুন গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাকে ঠিক কিভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে প্রথম আলো অনলাইন। পাঠকদের জন্য সেটি হুবুহু তুলে ধরা হলো :
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর লুকোচুরি কম হয়নি। তিনি পালিয়ে গেছেন বলে সরকার ও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল। তবে ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন দ্রুতই গ্রেপ্তার হবেন—এমন কথা পুলিশ ও সরকারের ঊর্ধ্বতনেরা বলে আসছিলেন। অবশেষে আজ রোববার তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলো।
থানায় অভিযোগ করতে আসা ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির সঙ্গে কথোপকথনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন ওসি মোয়াজ্জেম। এ ঘটনায় করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ।
গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশ সূত্র জানায়, ওসি মোয়াজ্জেম গতকাল শনিবার রাতে তাঁর এক আত্মীয়ের বাসায় ছিলেন। আজ হাইকোর্টে গেলে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
মোয়াজ্জেমের দূর সম্পর্কের আত্মীয় খায়রুল ইসলাম আজ প্রথম আলোকে বলেন, জামিনের জন্য মোয়াজ্জেম এসেছিলেন আদালতে। পরে শুনানির তারিখ পিছিয়ে কাল সোমবার দিলে পুলিশ মোয়াজ্জেমকে গ্রেপ্তার করে বিকেল চারটায়।
মোয়াজ্জেম হাইকোর্টে এসেছিলেন সকাল সাড়ে ১০টায় ।
আজ বেলা পাঁচটার দিকে রমনা জোনের ডিসি মারুফ সর্দার তাঁর কার্যালয়ে সাংবাকিদকের জানান, হাইকোর্টের কদম ফোয়ারার কাছে থেকে মোয়াজ্জেমকে গ্রেপ্তার হয়।
মারুফ সর্দার বলেন, তাঁকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি সোনাগাজী থানাকে জানানো হয়েছে। যেহেতু ওই থানায় গ্রেপ্তারের পরোয়ানা আছে, সে জন্য তাদের কাছে তাঁকে হস্তান্তর করা হবে। এরপর তারা ঠিক করবেন কোন আদালতে ওঠাবেন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল গত ২৭ মে পরোয়ানা জারি করেন। ৩১ মে পরোয়ানার চিঠি ফেনীর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পৌঁছায়। কিন্তু পুলিশ সুপার কাজী মনির-উজ-জামান বারবার বিষয়টি অস্বীকার করতে থাকেন। একপর্যায়ে ৩ জুন রাতে পরোয়ানা হাতে পাওয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি। এর দুই দিন পর বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে পরোয়ানা রংপুর রেঞ্জে পাঠানো হয়। তখন আবার রংপুর রেঞ্জ বলেছে, কাজটি বিধি মোতাবেক হয়নি।
পুলিশের এই গড়িমসির সুযোগে মোয়াজ্জেম হোসেন সটকে পড়েছেন। এর আগে তাঁর মুঠোফোনটি সচল থাকলেও এক পর্যায়ে তা বন্ধ পাওয়া গেছে। মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সাইয়েদুল হক।
মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহানকে গত ৬ এপ্রিল পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করেন তাঁর মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। এর ১০ দিন আগে নুসরাত মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ জানাতে সোনাগাজী থানায় যান। থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন সে সময় নুসরাতকে আপত্তিকর প্রশ্ন করে বিব্রত করেন এবং তা ভিডিও করে ছড়িয়ে দেন। ওই ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হলে আদালতের নির্দেশে সেটি তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআই গত ২৭ মে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিলে ওই দিনই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।
এইচএ/রাতদিন