পাকিস্তানে টি-টোয়েন্টি সিরিজে খেলতে রাজি বাংলাদেশ। কিন্তু টেস্ট সিরিজ খেলতে চাইছে না।
কারণ কী?
দুটোই তো ক্রিকেট! টি-টোয়েন্টি সিরিজে যদি নিরাপত্তা ঠিক থাকে, তাহলে টেস্ট সিরিজে কেন থাকবে না? পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) এই যুক্তি তুলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কাছে টেলিফোনে গরম কিছু বাতচিতও করেছে। সিরিজ শুরুর সময় ক্রমশ ঘনিয়ে আসছে। কিন্তু এখনো সিরিজটা হবে কিনা- সেই গ্যারান্টি নেই। দু’দেশের ক্রিকেট বোর্ডের মধ্যে কথাবার্তা চলছে। রোববার, ২২ ডিসেম্বর দুপুর পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বার্তা২৪.কম-কে বিসিবি’র প্রধান নির্বাহী নিজামুদ্দিন চৌধুরী সুজন জানান- ‘সিরিজ হচ্ছে না, বা হচ্ছেই-এমন কোনো সিদ্ধান্তই এখন পর্যন্ত স্থির হয়নি। কিছুই বলা যাচ্ছে না। আমরা আমাদের যথাযথ যুক্তিগুলো পিসিবি-কে জানিয়েছি এবং জানাচ্ছি। কিন্তু তারা কিছুতেই বুঝতে পারছে না। আমাদের কাছে যা বড় সমস্যার বিষয় মনে হচ্ছে সেটাকে পিসিবি সমস্যা হিসেবে মনেই করছে না!’
আলোচনার পরিস্থিতি এমন অবস্থানে থাকলেও তো উভয়পক্ষ মিলে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো মুশকিল! পাকিস্তানের মাটিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সম্ভাব্য সফর এখন সেই সঙ্কটে পড়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে-টি-টোয়েন্টি খেলতে পারলে কেন পাকিস্তানের মাটিতে টেস্ট খেলতে চাইছে না বাংলাদেশ।
সেই প্রশ্নের বিস্তারিত উত্তর মিলল এমন-
টি-টোয়েন্টি সিরিজ মাত্র কয়েক দিনের। কিন্তু দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের জন্য পাকিস্তানে অনেক লম্বা সময় ধরে থাকতে হবে দলকে। অন্তত আরো পনের দিন বেশি থাকার প্রয়োজন হবে। লম্বা সময় ধরে অ-নিরাপদ কোনো দেশে বিসিবি তাদের ক্রিকেটারদের পাঠাতে রাজি নয়। পাকিস্তান যদিও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নিশ্চয়তা দিচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হলো সিরিজ লম্বা হলে নিরাপত্তায় কিছুটা ঢিলেঢালা ভাব অবশ্যই দেখা দেয়। শুরুতে থাকা নিখুঁত ও কড়া নিরাপত্তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিথিল হতে বাধ্য। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি হয়তো এক মাঠে তেমন কোনো ব্যবধান ছাড়া টানা তিন দিনেই শেষ করা সম্ভব। কিন্তু দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ দুটি ভেন্যুতে খেলতে হবে। এক শহর থেকে আরেক শহরে ভ্রমণের বিষয়টা থাকছে। এমন ভ্রমণে নিরাপত্তাও অনেক বড় ইস্যু।
তাছাড়া কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ক্রিকেটারদের অবস্থান হবে শুধু হোটেল ও মাঠে। আর কোথাও যাওয়ার অনুমতি মিলবে না। এমনকি রাতের খাবার খেতে হোটেলের বাইরে যাওয়াও নিরাপদ নয়। সারাক্ষণ চোখের সামনে বন্দুকের নলের কড়া পাহারা। এমন পরিস্থিতিতে নির্ভেজালভাবে ক্রিকেটের দিকে মনোযোগ রাখাও কঠিন কাজ।
সমস্যা আরো আছে।
বাংলাদেশ দলের কোচিং স্টাফদের বেশিরভাগ এখন বিদেশি। পাকিস্তানের মাটিতে এই বিদেশি কোচিং স্টাফদের বেশিরভাগই যেতে সম্মত হবেন না। নিয়মিত এই কোচিং স্টাফদের ছাড়া টি-টোয়েন্টি সিরিজ হয়তো খেলা যায়। কিন্তু টেস্ট সিরিজে নিয়মিত কোচিং স্টাফ ছাড়া খেলার সিদ্ধান্তটা হবে চরম বোকামির।
বিসিবি আগেই জানিয়েছে এই সিরিজের জন্য দলের কোনো ক্রিকেটার যেতে না চাইলে তাকে বাধ্য করা হবে না। এরই মধ্যে খবর বেরিয়েছে সিনিয়র বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার পাকিস্তান সফর থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়ার চিন্তা করছেন। চলতি বছরের মার্চে ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে রক্তাক্ত হামলার সেই দুঃস্মৃতি এখনো তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। পাকিস্তানের মাটিতে ক্রিকেট খেলতে গিয়ে ক্রিকেটের চেয়ে নিরাপত্তা নিয়ে যদি বেশি ভাবতেই হয়-তাহলে সেখানে খেলতে যাওয়াই বা কেন?
বলা হচ্ছে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট দল তো পাকিস্তানে এখন টেস্ট খেলছে। তাহলে বাংলাদেশ খেললে সমস্যা কোথায়?
সমস্যা অবশ্যই আছে। বাংলাদেশকে তাদের দেশে গিয়ে ক্রিকেট খেলার জন্য পাকিস্তান এখন যেরকম চড়া সুরে কথা বলছে, এমন উচ্চারণ কি তারা অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা বা নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে করতে পারবে? ক্রিকেট খেলতে হবে। প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্কও রাখতে হবে। কিন্তু তারও আগে মনে রাখতে হবে-ক্রিকেট মাঠের চেয়ে জীবনের ক্ষেত্রফল অতি অবশ্যই অনেক বড়!