রংপুরে ধর্ষণের শিকার শিশু অন্তঃসত্ত্বা, ‘ধর্ষকের’ মৃত্যু ঘিরে রহস্য

রংপুরে ধর্ষণের শিকার হয়ে তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে । ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর তোফাজ্জল হোসেন (৫৫) নামে এক ব্যক্তির রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। আর এ ঘটনার ওই শিশুর মা বাদি হয়ে থানায় মামলা দায়েরের পর, পরিবারটিকে স্থানীয় কেউ আর ঘর ভাড়া দিতে চাচ্ছেনা বলে অভিযোগ উঠেছে।

ঘটনাটি ঘটেছে, রংপুর নগরীর নজিরেরহাট এলাকায়। অন্তঃসত্ত্বা শিশুটি বর্তমানে একটি বেসরকারি সংস্থার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ ঘটনায় ধর্ষণের শিকার শিশুটির মা বাদী হয়ে নগরীর হাজিরহাট থানায় মামলা করেছেন।

এ ঘটনায় রংপুরে তোলপাড় শুরু হলেও পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেপ্তার বা মামলার কোনো কিনারা করতে পারেনি।

মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রংপুর নগরীর নজিরেরহাট এলাকার সোনার বাংলা নার্সারি ও অ্যাগ্রোবাংলা লিমিটেডে কেয়ারটেকার হিসেবে প্রায় ৩ বছর ধরে কাজ করতেন সদর উপজেলার চন্দপাট ইউনিয়নের ঈশ্বরপুর সরদারপাড়া গ্রামের মৃত খেতু শেখের ছেলে তোফাজ্জল হোসেন (৫৫)। সেখানে তার রান্নাবান্নার কাজ করতেন ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রীর মা।

মায়ের কাজ করার সুবাদে শিশুটিও সেখানে যাতায়াত করতো। এরই মধ্যে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। সম্প্রতি পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর দেখা যায় মেয়েটি ২৫ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা। তাৎক্ষণিক মেয়েটিকে নজিরেরহাট এলাকার ল্যাপরোসি মিশনে ভর্তি করা হয়।

অপরদিকে শিশুটির অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ার খবর জানাজানি হলে এ ঘটনার সঙ্গে তোফাজ্জল হোসেন জড়িত বলে প্রচার হতে থাকে। এরই মধ্যে গত শুক্রবার, ১৬ আগস্ট নার্সারিতে কীটনাশক পানে তোফাজ্জল আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রচার করে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তার মরদেহ নিয়ে এসে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়।

এরপর ধর্ষণের শিকার মেয়েটির মা বাদী হয়ে গত ১৮ আগস্ট হাজিরহাট থানায় অজ্ঞাতনামাদের অভিযুক্ত করে ধর্ষণ মামলা করেন।

চন্দনপাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নের বাসিন্দা তোফাজ্জল হোসেনকে একজন ভালো ব্যক্তি হিসেবে জানতাম। তিনি সোনার বাংলা নার্সারিতে চাকরি করতেন। সেখানে কীটনাশক পান করে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে জেনেছি। এরপর মালিকপক্ষের লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করলে তিনি সেখানেই মারা যান।

তিনি আরও বলেন, তার বিরুদ্ধে একটি মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় তিনি প্রকৃত দোষি নাকি অন্য কেউ জড়িত তা খতিয়ে দেখা দরকার।

সোনারবাংলা নার্সারি অ্যান্ড এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মালিক জুয়েল বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে আমি গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ১৬ আগস্ট খবর পাই তোফাজ্জল বিষ খেয়েছে। সাথে সাথে আমি লোক দিয়ে তাঁকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে পাঠাই। সেখানেই সে মারা যায়। এরপর তাকে তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।

তোফাজ্জলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন।

হাজিরহাট থানার ওসি মোস্তাফিজার রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে যার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করা হয়েছে সে বিষক্রিয়ায় মারা গেছে বলে হচ্ছে। তবে তার মৃত্যু নিয়ে আমরা তদন্ত শুরু করেছি।

তিনি আরও বলেন, ‘ধর্ষণের শিকার শিশুটি অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে। তাকে আমরা রিকভারি করার চেষ্টা করছি।’

প্রায় একই কথা বলেন, ল্যাপ্রসি মিশনের সুপারভাইজার সিস্টার নওমি। তিনি বলেন, ‘শিশুটিকে সেবা যত্ন দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

ওই শিশুর মা বলেন, ‘তোফাজ্জল হোসেন সোনারবাংলা নার্সারি দেখাশুনার কাজ করতো। আর আমি তার রান্নাবান্নার কাজ করে দিতাম। আমার মেয়েও সেখানে আসা যাওয়া করতো। আমার মেয়ে আমাকে জানিয়েছে তোফাজ্জল আমার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। প্রথমে বিশ্বাস করিনি। পরে বিষয়টি বুঝতে পেরেছি।’

তিনি প্রশ্ন করেন, ‘এখন আমার এই মেয়েটার কি হবে? কি হবে পেটের বাচ্চাটার? আমাকে এখন কেউ ঘর ভাড়াও দিতে চাচ্ছে না।’

এইচএ/রাতদিন