ঢাকা থেকে ট্রাকে করে রংপুরে বাড়িতে ফেরার পথে বগুড়ায় করোনা আক্রান্ত সন্দেহে ফেলে গিয়েছিলেন ট্রাক চালক। গেল ২৯ মার্চ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তার শরীরে করোনা পজিটিভ আসে। শাহ আলম নামের ৫০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তিই বগুড়ায় প্রথম করোনা রোগী। গণমাধ্যমেও সেখবর প্রচার হয়েছিল। প্রায় মাস খানেক পরে আবারো গণমাধ্যমের শিরোনাম শাহ আলম। সেবার নাম প্রকাশ না হলেও এবার হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিতে ছবি তুলতেও মানা নেই তার। দীর্ঘ ২৬ দিন লড়াইয়ের পর অবশেষে জয় হয়েছে শাহ আলমের।
আজ শুক্রবার, ২৪ এপ্রিল বেলা ১১টায় বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আইসোলেশন কেন্দ্র থেকে সুস্থ হয়ে রংপুরে নিজ বাড়িতে ফিরেছেন তিনি।
এসময় হাসপাতালের চিকিৎসকরা শাহ আলমকে ছাড়পত্র আর ফুল উপহার নিয়ে বিদায় জানান। তাকে হাসপাতাল থেকে নিতে এসেছেন তার স্ত্রী। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর যেন নতুন জীবন পেয়ে উচ্ছ্বসিত শাহ আলম। এ অসাধারণ মুহূর্তের স্বাক্ষী হয়ে রইলেন তার স্ত্রী এবং হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
কৃতজ্ঞ শাহ আলম ধন্যবাদ জানাতে ভুললেন না। তিনি বলেন, ‘যারা আমাকে সেদিন বাসস্ট্যান্ড থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন এবং এতদিন চিকিৎসা দিয়েছেন তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ রইলো।’
রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে বড় কাচা বাজার কাওরান বাজারের সবজির আড়তে কাজ করতেন শাহ আলম। দেশে নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ শরু হলে গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণার পর ট্রাকে করে রংপুরের বাড়িতে ফিরছিলেন তিনি। ফেরার পথে ট্রাকেই তার কাশি ও শ্বাসকষ্ট দেখে করোনা সন্দেহে ট্রাক চালক শাহ আলমকে বগুড়ার মহস্থানগড় এলাকায় ফেলে দিয়ে চলে যায়।
পরে পুলিশের সহায়তায় প্রথমে শিবগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছে অসুস্থ শাহ আলম জানায় তিনি হৃদরোগের রোগী। পরে চিকিৎসকরা তার করোনার উপসর্গ দেখে ৩০ মার্চ মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল আইসোলেশন কেন্দ্রে ভর্তি করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখান থেকে তার নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠালে করোনা পজেটিভ পাওয়া যায়।
তারপর থেকেই শাহ আলম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকে। আর তার চিকিৎসায় এগিয়ে আসা প্রথম চিকিৎসক, অ্যাম্বুলেন্স চালক, পুলিশ, স্বাস্থ্য কর্মীসহ ২৪ জনকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়। পরে তাদের নমুনা টেস্টে নেগেটিভ পাওয়া যায়। পরীক্ষা করা হয় শাহ আলমের স্ত্রী সাজেদা বেগমের নমুনাও, তিনি শাহ আলমের সেবা করেছিলেন। তবে তার নমুনা টেস্টেও নেগেটিভ আসে।
বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল আইসোলেশন কেন্দ্রের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শফিক আমিন কাজল জানান, বগুড়ায় শনাক্ত প্রথম করোনা রোগী রংপুরের ধাপ এলাকার বাসিন্দা শাহ আলম। তার চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। চিকিৎসা পেয়ে তিনি এখন পুরোপুরি সুস্থ।
তিনি জানান, গত ১ এপ্রিল ও ৫ এপ্রিল তার নমুনা পজিটিভ আসে। তারপর তাকে নিবির পরিচর্যায় রাখা হয়। তার শারীরিক অবস্থা উন্নতি হলে গত ১৩ এপ্রিল নমুনা রাজশাহীতে পাঠানো হলে ফলাফল নেগেটিভ পাওয়া যায়। পরে আরেকবার নমুনা পাঠানো হলে গত ২১ এপ্রিলও তার ফলাফল নেগেটিভ আসে। সবশেষ ২২ এপ্রিল বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেলে নমুনা পাঠানো হলে সেখানেও নেগেটিভ আসায় তাকে ছাড়পত্র দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
সে অনুযায়ী শুক্রবার তাকে ছাড়পত্র দেয়া হয় এবং স্ত্রীসহ অ্যাম্বুলেন্সে করে তার বাড়ি রংপুরে পাঠানো হয়।
করোনা ভাইরাস থেকে জয়ী হওয়া শাহ আলম জানান, বগুড়ায় তিনি ভালো চিকিৎসা পেয়েছেন। চিকিৎসকসহ অন্যান্যরা সবাই খবর নিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বাড়িতে যাচ্ছি। বাড়িতে মানুষ যেন আমাকে অন্যচোখে না দেখে, সবার কাছে এটাই চাই। পরিবার নিয়ে সকলের সাথে সুস্থভাবে থাকতে চাই‘। সমাজিকভাবে যেন তাকে কেউ হয়রানী না করে সে বিষয়ে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।’ তিনি তার নিজের এবং করোনায় আক্রান্ত সবার জন্য দোয়াও কামনা করেন।
এবি/রাতদিন