রংপুরে মিনু হত্যাকান্ড: সাবেক জামাইকে মামলার বাদী বানানো নিয়ে প্রশ্ন মেয়ের

রংপুর শহরের মুলাটোলে ডিসি অফিসের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আরজুমান্দ বানু মিনু খুন মামলার বাদী বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন তার মেয়ে তানিয়া মাহজাবিন সুমি। তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বাদি এনায়েত হোসেন মোহন নিজেই এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকতে পারেন । অথচ পুলিশকে ভুল তথ্য দিয়ে বাদী হয়েছেন তিনি।


আজ বৃহস্পতিবার, ১০ সেপ্টেম্বর বিকেলে রংপুর রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সাংবাদিকদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা থেকে যুক্ত হয়ে তানিয়া মাহাজাবিন সুমি তার মা হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার দাবি করেন। খুনের শিকার ওই নারীর একমাত্র মেয়ে তিনি। এনায়েত হোসেন মোহনের সাথে তার বিয়ে হয়েছিল। তবে পরিবর্তিতে সুমি তার স্বামীকে তালাক দেন।


জানা গেছে, গত ১৯ মে মুলাটোলের নিজ বাড়িতে নৃসংশভাবে খুন হন আরজুমান্দ বানু ওরফে মিনু। চাকুরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর থেকে তিনি ওই বাড়িতে একাই ছিলেন।


সুমি অভিযোগ করেন, মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে করোনা ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কারণে ওই দিন ঢাকা থেকে তিনি আসতে পারেননি। তবে ময়নাতদন্তের পর মায়ের মরদেহ গ্রহণ, দাফন ও প্রয়োজনীয় কাজ কিভাবে হবে সেটার মতামত দেন তিনি।


তিনি আরও অভিযোগ করেন, আপত্তি স্বত্ত্বেও পুলিশ তার মায়ের মরদেহ হস্তান্তরের বিষয়ে তার প্রস্তাব রাখেননি। বরং তার প্রাক্তন স্বামীকে বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করেছে। উল্টো মোহন পরিবারের কেউ না হয়েও পুলিশকে জামাই পরিচয় দিয়ে মামলার এজহার দায়ের করে। বিষয়টি জানার পর মোহনের নাম প্রত্যাহার করে পুলিশকে এজহারকারী হবার অনুরোধ করা হলেও তাতে কর্ণপাত করা হয়নি। তালাক দেয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে ভয়ভীতি ও হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল মোহন। একই এলাকায় পাশাপাশি বাড়ি, ব্যক্তিগত প্রভাব ও নিকটতম প্রতিবেশি হওয়ায় হত্যাকান্ডের ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে পুলিশকে ভুল তথ্য দিয়ে বাদী হয়েছেন মোহন। এসব ঘটনাকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন নিহতের একমাত্র সন্তান।

তার দাবি, ঘটনার দিন রাতে থানায় দায়ের করা এজাহারে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে আরজুমান্দ বানুকে হত্যা করা হয়েছে বলে মোহন দাবি করে কিভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা প্রত্যক্ষদর্শীর মতো করে বর্ণনা দেন। তার দেয়া বর্ণনার সাথে এই মামলার আসামী হিসেবে গ্রেফতার হওয়া আরমান আলীর পুলিশকে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির মিল রয়েছে। এসব থেকে বোঝা যায়, হত্যাকান্ডে নিজের জড়িত থাকার বিষয়টিকে আড়াল করতে মোহন নিজেই মামলার বাদী হয়েছেন।


পুরো ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের অংশ দাবি করে তানিয়া মাহজাবিন জানান, তার মা চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর চাকরির কাগজপত্র, টাকা, দীর্ঘদিনের বেতনের সঞ্চয়, স্বর্ণালংকার, জমির দলিল ও দলিল সংক্রান্ত কাগজপত্রাদি ব্যাংক, পোস্ট অফিস ও বাড়িতে রাখতেন। কিন্তু ২৮ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ ঘটনা¯’লে গিয়ে সবকিছু তছনছ অবস্থায় দেখা যায়। বাড়ির সামনের বা পেছনের দরজা ভাঙার বা জোরপূর্বক প্রবেশের কোনো আলামত সেখানে মেলেনি। এছাড়া জমির দলিল, দলিল সংক্রান্ত কাগজ এবং ৮-৯ ভরির বেশি স্বর্ণালংকার পাওয়া যায়নি। শুধু তাই নয় বর্তমানে ওই বাড়িতে কেউ না থাকায় সম্প্রতি পরিকল্পিতভাবে চুরি সংঘটিত করা হয়েছে। যার সাথে মোহনের যোগসূত্র রয়েছে বলেও দাবি তানিয়ার।


এবি/রাতদিন