রাশিয়ার করোনা টিকা ‘শক্তিশালী ও কার্যকর’

করোনাভাইরাসের টিকা তৈরি নিয়ে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ ও প্রতিষ্ঠান শুরু থেকেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে তার মধ্যে রাশিয়ার তেমন কোনো উদ্যোগের কথা খুব একটা শোনা যায়নি। কিন্তু গত আগস্ট মাসে তারা হুট করেই স্থানীয়ভাবে ব্যবহারের জন্য করোনার টিকার প্রথম অনুমোদন দেয়।

এদিকে টিকাসংক্রান্ত কোনো তথ্য প্রকাশ না করেই বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে করোনার টিকার অনুমোদন দিয়ে সমালোচনার জন্ম দেয় দেশটি। দ্রুতগতিতে এ টিকা অনুমোদন দেওয়া নিয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোয় এর কার্যকারিতা নিয়েও তোলা হয়েছে নানা প্রশ্ন।

তবে এবার রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা তাদের করোনার টিকাটি নিয়ে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করলেন। এতে দেখা গেছে, টিকার প্রাথমিক পরীক্ষায় এটি প্রতিরোধী প্রতিক্রিয়ার প্রমাণ দেখাতে পেরেছে।

রাশিয়ার গবেষকেরা মেডিকেল জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট’–এ তাদের গবেষণাসংক্রান্ত নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। এতে তারা দাবি করেছেন, গবেষণায় অংশ নেওয়া প্রত্যেক ব্যক্তির শরীরে তাদের টিকা দেওয়ার পর অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, যা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে পারে। এ টিকার বড় কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই।

এখন টিকার প্রাথমিক গবেষণাসংক্রান্ত নিবন্ধ প্রকাশের পর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকার কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা প্রমাণের জন্য যে পরীক্ষাটি চালানো হয়েছে, তা খুবই ছোট আকারের পরীক্ষা। কিন্তু মস্কো বলছে, তাদের গবেষণার ফল সমালোচকদের জন্য একটা উচিত জবাব।

কিছু পশ্চিমা বিশেষজ্ঞ রাশিয়ার দ্রুত টিকা অনুমোদনের বিষয়ে উদ্বেগে জানিয়ে বলেন, দেশটির বিশেষজ্ঞরা টিকা পরীক্ষার অনেক দিক উপেক্ষা করছেন।

গত মাসে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, তাদের টিকাটি প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে গেছে। তার এক মেয়েও এ টিকা নিয়েছিলেন। পরে ওই মেয়ের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে দেখা গেছে।

ল্যানসেটের প্রতিবেদনে বলা হয়, কৃত্রিম উপগ্রহের নামে নামকরণ করা স্পুটনিক-৫ নামের টিকাটি নিয়ে জুন ও জুলাই মাসে দুটি পরীক্ষা চালানো হয়। প্রতিটি পরীক্ষায় ৩৮ জন সুস্থ স্বেচ্ছাসেবীর শরীরে দুই ডোজ করে টিকা ও বুস্টার দেওয়া হয়। প্রথমবার টিকা দেওয়ার তিন সপ্তাহ পর টিকার কার্যক্ষমতা বাড়ানোর বুস্টার প্রয়োগ করা হয়।

পরীক্ষায় অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবকদের বয়স ছিল ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। তাদের ৪২ দিন পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। তিন সপ্তাহের মধ্যে সবার শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে দেখা যায়।

টিকার সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে মাথাব্যথা ও অস্থিসন্ধিতে ব্যথা হয়। এ পরীক্ষা অনেকটাই উন্মুক্ত। এতে দৈবচয়নপদ্ধতি রাখা হয়নি। টিকাগ্রহীতার প্রত্যেকেই টিকা পাওয়ার বিষয়টি আগে থেকে জানতেন। প্রতিবেদনে অবশ্য বলা হয়েছে, আরও বড় ও দীর্ঘমেয়াদি পরীক্ষা দরকার। এতে প্লেসেবো বা অন্য ওষুধের সঙ্গে টিকার তুলনা করে দেখতে হবে। এতে দীর্ঘ মেয়াদে টিকার নিরাপত্তা ও কার্যকারিতার বিষয়টি বোঝা যাবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, টিকা পরীক্ষার তৃতীয় ধাপে বিভিন্ন বয়স ও ঝুঁকিপূর্ণ মানুষ ঠিক করে ৪০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর ওপর টিকাটি প্রয়োগ করা হবে।

রাশিয়ার টিকাটি তৈরিতে সাধারণ সর্দি ভাইরাস অ্যাডেনোভাইরাসের বিশেষ প্রজাতি ব্যবহার করা হয়েছে, যা প্রতিরোধী প্রক্রিয়াকে উদ্দীপ্ত করতে সক্ষম হয়।

যুক্তরাজ্যের বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ রাশিয়ার টিকার ফলাফল প্রকাশকে উৎসাহব্যঞ্জক ও এখন পর্যন্ত ভালো বলে মন্তব্য করেছেন। তবে একে আরও সামনে এগিয়ে নিতে হবে বলে তাদের পরামর্শ। তারা বলছেন, যদিও টিকাটি পরীক্ষার দ্বিতীয় ধাপে সবার মধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরি করেছে, তার মানে এটি ভাইরাস থেকে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা দেবে, তা নয়। এটা এখনো প্রতিষ্ঠা করা যায়নি।

টিকাটির পেছনে বিনিয়োগ করা রাশিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের প্রধান কিরিল দিমিত্রেভ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ল্যানসেটের প্রতিবেদনটি রাশিয়ার টিকা নিয়ে অযৌক্তিক সমালোচনাকারীদের জন্য চপেটাঘাত। টিকাটির তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার জন্য তিন হাজারের বেশি মানুষকে যুক্ত করা হয়েছে।’

রাশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মিখাইল মুরাস্কো বলেছেন, আগামী নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসে তার দেশে টিকা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা লোকজন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ১৭৬টি করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে পরীক্ষা চলছে। এর মধ্যে ৩৪টি টিকা মানুষের ওপর পরীক্ষা করা হয়েছে। আটটি টিকা তৃতীয় ধাপ বা সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে। ( সুত্র; আমাদের সময় )

এসকে/রাতদিন