‘সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন’- এর পক্ষ থেকে রাষ্ট্র মেরামতের তাগিদ দিয়ে ১৮ দফা সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কার ও নাগরিক ভাবনা শীর্ষক অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে বৃহস্পতিবার, ২৩ মে রাজধানীতে প্রস্তাবগুলো দেওয়া হয়েছে।
প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে- রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তন, কার্যকর জাতীয় সংসদ পরিণত করা, স্বাধীন বিচার বিভাগ ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান।
বৈঠকে এসব সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলা হয়, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের রাজনীতিতে চরম ভারসাম্যহীনতা এবং সংকটময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অতীতে অনেকবার আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে জাতিগতভাবে আমরা রাজনৈতিক সংকট সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ১৯৯০ সালে স্বৈরশাসন বিরোধী আন্দোলনকালে ‘রাজনৈতিক দলসমূহের পারস্পরিক আচরণবিধি’ বা তিন জোটের রূপরেখা স্বাক্ষর ছিল এই ধরনের উদ্যোগের একটি সফল পরিণতি। তবে রূপরেখা স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে উদ্যোগটি সফল হলেও, বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তা ছিল চরম ব্যর্থ; যে ব্যর্থতার দায়ভার আজও জাতিকে বহন করতে হচ্ছে, বার বার নিপতিত হতে হচ্ছে গভীর সংকটে। আমরা মনে করি, এই ধরনের সংকটের স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। আর এ জন্য চাই, তিন জোটের রূপরেখার আদলে একটি সমঝোতা স্মারক বা জাতীয় সনদ প্রণয়ন ও স্বাক্ষর।’
অনুষ্ঠানের সভাপতি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, ‘রাষ্ট্রের মেরামত জরুরি হয়ে পড়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, এটা বারবার প্রমাণিত হয়েছে। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো কিছু একটা বের করতে হবে।’
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আগের রাতে কেউ ভোট না দিতে পারে সেজন্য ভোট সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত হওয়া দরকার এবং ভোটের দিন সকালেই ব্যালট বক্স কেন্দ্রে পাঠানো দরকার।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমাদের শাসনব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। তাই আশা করছি, শাসনব্যবস্থা ঠিক করা তথা রাষ্ট্রকে মেরামতের জন্য আমাদের সম্মানিত রাজনীতিবিদ রাজনৈতিক সংস্কারগুলো বাস্তবায়নে সদিচ্ছা প্রদর্শন করবেন, যাতে বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণ ঘটানো যায়।’
ড. হামিদা হোসেন বলেন, আইয়ুব খানের সময়েও আমরা অনেকটা স্বাধীনভাবে লিখেছি, এরশাদের সময়ে আমরা প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করেছি। অথচ আজকে আমরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথাও সপষ্ট করে বলতে পারি না, নানান ধরনের চাপের মধ্যে থাকতে হয়। আমাদের দলগুলোর মধ্যেই গণতন্ত্র নেই। আর দলের মধ্যে গণতন্ত্র না থাকলে সংসদে কীভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে?
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘রাজনীতিতে ক্ষমতার ভারসাম্য হারিয়ে যাচ্ছে। সুদক্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না। জনগণকে ক্ষমতাহীন করে ফেলা হয়েছে। বলা হচ্ছে, মানুষ রাস্তায় নামছে না। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো কি জনগণের দাবিগুলোকে সামনে নিয়ে মানুষকে সংগঠিত করে তুলতে পারছে? এই অবস্থার উত্তরণে আমি মনে করি, জনগণকে ক্ষমতায়িত করে তুলতে হবে, আইন-শৃঙ্খলার বাহিনীর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে, বিচার বিভাগ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনত নিশ্চিত করতে হবে এবং ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
ড. সিআর আবরার বলেন, ‘আমাদের অধিকারগুলো সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে, মানুষ গুম-খুনের শিকার হচ্ছে। আজকে নির্বাচন কমিশন ভোটাধিকার নির্বাসন কমিশনে পরিণত হয়েছে। আজকে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো নানান ধরনের চাপ রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আজ শুধুমাত্র জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদের বিরোধিতার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। অবাক করা বিষয় হলো, আজকে আমরা এসবের প্রতিবাদও দেখছি না। সকলেই যেন এসব মেনে নিচ্ছে। আমি মনে করি, এই ভীতি ও হতাশার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে, মানুষকে সংঘবদ্ধ করে তুলতে হবে।’ সূত্র : কালের কন্ঠ
এইচএ/রাতদিন