২৭ বছর বয়সী শুকুর আলী নয়ন। একদিকে অভাব, অন্যদিকে ছিল না বসতবাড়ি। তাই মা-বাবা, ছোট দুই ভাই এবং একমাত্র বোনকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জে চলে গিয়েছিলেন বেশ কয়েক বছর আগে। সেখানে একটি গার্মেন্টসে কাজ করতেন। কয়েক বছর ধরে টাকা জমিয়ে গ্রামে এক টুকরো জমি কিনে বাড়ি করেছেন। ফলে বাবা-মাসহ ভাইদের মাস চারেক আগে বাড়ি ফেরৎ পাঠিয়েছেন, বোনকে দিয়েছেন বিয়ে। কিছুদিন পর নিজেরও একেবারে ফিরে আসার কথা ছিল বাড়িতে। বিয়ে-সংসার করাও পরিকল্পনা ছিল।
কিন্তু সবকিছুই শেষ করে দিল আগুন। নারায়নগঞ্জে মসজিদে এসি বিস্ফোরণের সময় সেখানে অন্যদের সাথে নয়নও ছিলেন। অগ্নিদগ্ধ হয়ে পরে তিনি মারা যান হাসপাতালে। নারায়নগঞ্জে মডেল নামের একটি গার্মেন্টসে কাজ করতেন তিনি।
শুকুর আলী নয়নের বাড়ি লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের তালুক পলাশী গ্রামে। বাড়িতে মরদেহ আসার পর আজ রোববার, ৬ সেপ্টেম্বর দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
তার বন্ধু শুভ শামীম জানান, নারায়নগঞ্জে তারা একসাথে বিস্ফোরণ হওয়া মসজিদের মেসেই থাকতেন। শুক্রবার গার্মেন্টস ছুটির পর নয়ন রুমে ফিরে নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়েছিল। নামাজ শেষে ফিরলে একসাথে রাতের খাবার খাওয়ার কথা। কিন্তু হঠাৎ বিস্ফোরণে সব শেষ হয়ে গেল।
তিনি জানান, নয়নের ভগ্নিপতি ও মা গত কাল শনিবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে গিয়ে মরদেহ বুঝে নেন।
আদিতমারীর তালুক পলাশী এলাকার যুবক খাদিমুল ইসলাম জানান, নয়নদের ভিটেমাটি কিছুই ছিল না। ওরা সবাই নারায়ণগঞ্জে গার্মেন্টে কাজ করত। কিছুদিন আগে বোনকে বিয়ে দিয়েছে। এলাকায় এক দোনের মতো জমি কিনে সেখানে নতুন কাঁচা একটি বাড়ি তৈরি করেছে। সেখানে মা-বাবা ও দুই ভাইকে পাঠিয়েছে। কিছুদিন পর নয়নের আসার কথা ছিল।
আজ সকালে নয়নের মরদেহ পৌছলে বাবা মেহের আলী, দুই ছেলে ও মেয়েসহ আত্মীয়-স্বজনদের আহাজারিতে আশপাশের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।
জানা গেছে, ১৫ হাজার টাকায় অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে আনা হয় নয়নের মরদেহ। সেই টাকাও দেয়ার সাধ্য ছিল না নয়নের দিনমজুর বাবা মেহের আলীর। পরে তাদের সহায়তার এগিয়ে আসে প্রশাসন ও এলাকার লোকজন।
এবি/রাতদিন