শিশু ধর্ষণচেষ্টা মামলায় অভিযুক্ত মো. মতিউর রহমান (মুক্ত মিয়া) উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে প্রাইভেটকারে চড়ে এলাকায় আসেন। গাড়ি থেকে নামার পর বরের মতো করে তাকে ফুলের মালা পরিয়ে ও ফুল ছিটিয়ে বরণ করা হয়। মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার নিয়ে করা হয়েছে শোডাউন। বাদ যায়নি মিষ্টি বিতরণও। এসব আনন্দ উল্লাস করেছে অভিযুক্ত ও তার পক্ষের লোকজন।
গত সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে আখাউড়া উপজেলার হীরাপুর গ্রামে। এ নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। মুক্ত মিয়ার ফুলের মালা পরা ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় নিন্দার ঝড় উঠেছে।
এলাকাবাসী ও মামালার সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় নুরপুর লামারবাড়ি মাদ্রাসায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্রীকে ‘মজা’ খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে গত ১৫ জুলাই সকালে একটি পরিত্যক্ত ঘরের বারান্দায় নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন পাশের বাড়ির মুক্ত মিয়া (৮০)। এ সময় ওই ছাত্রীর চিৎকারের আশপাশের লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে। মুক্তা মিয়া এসময় পালিয়ে যান।
বিষয়টি এলাকার মাতাব্বরদের জানান ওই ছাত্রীর মামা। দীর্ঘদিন বিচার না পেয়ে গত ১৭ আগস্ট ওই ছাত্রীর মা মুক্তা মিয়াকে আসামি করে আখাউড়া থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় গত ৯ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট থেকে জামিন পান মুক্তা মিয়া।
জামিন পেয়ে সোমবার বিকেলে এলাকায় পৌঁছালে তাকে ফুলের মালা পরিয়ে ও ফুল ছিটিয়ে বরণ করে নেয় তার পক্ষের লোকজন। পরে ১০ থেকে ১২টি মোটরসাইকেল ও কয়েকটি প্রাইভেটকার নিয়ে ফুলের মালা গলায় পরিয়ে এলাকায় শোডাউন ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়। এসময় তার ছেলেরা বলেন, ‘আমাদের বাবা ওমরা হজ্ব করে এসেছেন।’
একই গ্রামের প্রবীণ আবুল খায়ের বলেন, ‘সোমবার মুক্ত মিয়া জামিন পেয়ে এলাকায় আসে। তার পরে তার ছেলে অ্যাডভোকেট মিলন তাকে কয়েকটা প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল দিয়ে শোডাউন দিয়ে গলায় ফুলের মালা পরিয়ে ঘুরে বেড়ায়। আমাদেরকে মিষ্টি খাওয়ার দাওয়াত দেয়। আমারা কেউ মিষ্টি খেতে যায়নি।’
আখাউড়া স্থলবন্দরে সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী ও হিরাপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্বাস উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘মুক্ত মিয়া আমার আপন মামা হন। উনি যে ঘটনাটি ঘটিয়েছেন তার সত্যতা পেয়েছি। চেষ্টা করেছি পরিবারের লোকজন নিয়ে মেয়ের পক্ষের সাথে সমাধান করার জন্য। জামিনে এসেই গলায় ফুলের মালা পরে এলাকায় শোডাউন ও মিষ্টি বিতরণ করেছে- এটা ভাল হয়নি।’
নির্যাতিত শিশুর মা বলেন, ‘আসামি জামিন পেয়ে খুশিতে মিষ্টি বিতরণ করেছে। ফুলের মালা পরে আমাদের বাড়ির পাশে মিছিল করে গেছে। ওরা প্রভাবশালী। আমাদের হুমকি ধামকি দিচ্ছে। আমরা আতঙ্কে আছি।’
মো. মতিউর রহমান ওরফে মুক্ত মিয়ার ছেলে অ্যাডভোকেট মিলন বলেন, ‘আমার বাবাকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক ফাঁসানোর জন্য মামলা দিয়েছে। মহামান্য হাইকোর্ট আমার বাবার বয়স বিবেচনা করে জামিন দিয়েছেন।’
অভিযুক্ত মুক্তা মিয়া বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়। আমি মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলি। তাই আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।’
এবি/রাতদিন