নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভা এলাকায় করোনা ভাইরাসের কারণে কর্মহীন ঘরবন্দি অসহায় মানুষের জন্য সরকারের খোলাবাজারের (বিশেষ ওএমএস) ১০ টাকা কেজি দরের চাল বিক্রি শুরু হয়েছে। কিন্তু চালের অপ্রতুল বরাদ্দের কারণে অনেকেই তা কিনতে পাচ্ছেন না। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়েও অনেকেই চাল সংগ্রহ করতে না পেরে নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। এ নিয়ে অসহায় এই মানুষদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা গেছে, গত মঙ্গলবার থেকে এই চাল বিক্রি শুরু হয়েছে। সৈয়দপুর উপজেলা খাদ্য বিভাগের ছয়জন ডিলার সপ্তাহের রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার পর্যায়ক্রমে পৌরসভা এলাকায় ওই চাল বিক্রি করছেন। সরকারি নির্দেশনা অনুয়ারী প্রতিজন কর্মহীন অসহায় দুস্থ মানুষ ১০ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ৫ কেজি করে চাল কিনতে পারবেন। সে হিসেবে প্রতিদিন ওএমএস এর দুই ডিলার প্রত্যেকে দুই শত জন করে সর্বমোর্ট ৪ শ’ মানুষের কাছে চাল বিক্রি করতে পারছেন। কিন্তু শ্রমিক অধ্যূষিত শহর সৈয়দপুর পৌরসভা এলাকায় হাজার হাজার শ্রমজীবী মানুষ রয়েছেন।
সিডিউল অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার, ৯ এপ্রিল সৈয়দপুর শহরের রেলওয়ে মাঠে খাদ্য বিভাগের তালিকাভূক্ত ডিলার মো. মুস্তাফিজ আলী ও ফরিদা পারভীন প্রত্যেকে ১ হাজার (এক মে. টন) কেজি করে চাল বিক্রি করেন। কিন্তু বরাদ্দ অপ্রতুল হওয়ার অনেক মানুষ সরকারের ১০ টাকা কেজি দরের ওএমএস এর চাল সংগ্রহে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান।
ওইদিন সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সৈয়দপুর রেলওয়ে মাঠে দুই জন ডিলার পাশাপাশি বসে চাল বিক্রি করছেন। সকাল ১০ টা থেকে এ চাল বিক্রি কথা থাকলেও অভাবী লোকজন ভোর থেকে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েন। তখন বেলা সাড়ে ১১ টা। অথচ ডিলারদের বরাদ্দকৃত চাল বিক্রি প্রায় শেষ পর্যায়ে। তখনও লাইনে প্রায় অর্ধশতাধিক নারী পুরুষ দাঁড়িয়ে ছিলেন।
চাল কিনতে এসে খালি হাতে ফিরে যাওয়া মো. সেলিমের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, তাঁর বাড়ি সৈয়দপুর পৌরসভা ৬ নম্বর ওয়ার্ডে। তিনি ১০ টাকা কেজির চাল নিতে এসে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু ডিলারের অনুকূলে বরাদ্দকৃত চাল শেষ হয়ে যাওয়ায় সংগ্রহ করতে পারেননি তিনি।
এরকম আর একজন বৃদ্ধা মোছা. মালেকা বেগম। পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ওই বৃদ্ধা জানান, সকাল ৭ টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। দীর্ঘ সময় লাইনের দাঁড়িয়ে থাকার পর চাল মিলে সাড়ে ১১ টার দিকে।
বৃদ্ধ মালেকা বেগমের মতো অনেকেই দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে চাল সংগ্রহ করতে পারলেও অনেকে আবার চাল সংগ্রহে ব্যর্থ হয়ে নিরাশ হয়ে ফিরেন।
সৈয়দপুর উপজেলা খাদ্য অফিসের খাদ্য পরিদর্শক মো. নুরে রাহাদ রিমন ও মো. আরিফ বিল্লাহ্ এদিন চাল বিতরণ তদারকির দায়িত্বে ছিলেন। তারা জানান, সরকারি নিয়মনীতি মেনে ছয় জন ডিলাদের মাধ্যমে প্রতি সপ্তাহের রবিবার, মঙ্গলবার, বৃহস্পতিবার ১০ টাকা কেজির চাল বিক্রি করছেন ডিলাররা। আর সৈয়দপুর থানা পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সৈয়দপুর ইউনাইটেড ভলান্টিয়ার অ্যাসোসিয়েশনের বেশ কয়েকজন সদস্য কর্মহীন মানুষকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চাল সংগ্রহে সার্বিক সহযোগিতা দেন।
সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. নাসিম আহমেদ বলেন, সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী সপ্তাহে তিন দিন ওএমএসএর ডিলারদের মাঝে চাল বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। আপাতত এই বরাদ্দ বাড়ানোর কোন সুযোগ নেই।