নওগাঁয় করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া এক ব্যক্তির (৬০) মরদেহ দাফনে অংশ নিয়েছেন রোভার স্কাউটের চার সদস্য। যদিও ঢাকা ফেরত ওই ব্যক্তির মরদেহ কবরে নামানোর সময় তাদের তেমন কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে চলছে নানা সমালোচনা। অভিযোগ উঠেছে করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফনে উপজেলায় যে কমিটি আছে তাদের দায়িত্ব পালন নিয়েও । আবার দাফনে অংশ নিয়েও বিপাকে পড়েছেন ওই চার যুবক।
জানা গেছে, শুক্রবার, ১৭ এপ্রিল বিকেল ৪টার দিকে নওগাঁ সরকারি কবরস্থানে জানাজা শেষে ওই ব্যক্তির দাফন সম্পন্ন হয়। এ সময় মৃত ব্যক্তির পরিবারের কেউ ছিলেন না। করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির দাফন-কাফনের জন্য সদর উপজেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির পাঁচ সদস্য এবং রোভার-স্কাউটের চার সদস্য ওই ব্যক্তির জানাজা ও দাফনে অংশ নেন।
রোভার স্কাউটের ওই সদস্যরা হলেন, শহরের চকদেব জনকল্যাণ মহল্লার বাসিন্দা ফরিদ আলম, নিরব হোসেন, মারুফ হোসেন ও সোহাগ হোসেন। ফরিদ আলম সান্তাহার সরকারি কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং বাকি সবাই জনকল্যাণ মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্র।
উপজেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সদস্যরা ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) পরিহিত অবস্থায় কবরের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। অন্যদিকে রোভার স্কাউটের সদস্যদের নিরাপত্তাহীন অবস্থায় করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তির মরদেহ কবরে নামাচ্ছেন- এরকম একটি ছবি নিয়ে ফেসবুকে চলছে নানা সমালোচনা।
ঘটনার পর থেকে রোভার স্কাউটের ওই সদস্যদের পরিবারকে বাড়ি থেকে প্রতিবেশীরা বের হতে দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে।
রোভার স্কাউটের সদস্য ফরিদ আলম বলেন, শুক্রবার এলাকার এক বড় ভাইয়ের ফোন পেয়ে মৃত ব্যক্তির বাড়িতে যাই। এরপর অন্য রোভার স্কাউট সদস্যদের ডেকে নেই। সেখানে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পাঁচজন ব্যক্তি ছিলেন, তবে তারা বয়স্ক হওয়ার বাড়ি থেকে মরদেহ বের করতে কষ্ট হচ্ছিল। এ জন্য আমরা নিজ থেকে মরদেহ বাড়ি বের করতে সহযোগিতা করি। তবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের লোকজন গোসল ও জানাজার কাজ করেন। পরে আমরা দুজন মিলে মরদেহ কবরে নামাই।
ঘটনার পর থেকে রোভার স্কাউটের চারজন আমার বাড়িতে আছে। ফলে বাসার মালিক আমাকে বাসা ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে বলেছেন।
নিরব হোসেন জানান, তার পরিবারকে গতকাল থেকে বাড়ি থেকে প্রতিবেশীরা বের হতে দিচ্ছে না। তার বাবা মিন্টু সকালে শহরের সরিষাহাটির মোড়ে চায়ের দোকানে গেলে স্থানীয়রা চা দোকান খুলতে দেয়নি এবং সেখান থেকে তাকে তাড়িয়ে দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে একটা কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটির পক্ষ থেকে দাফন-কাফন সম্পন্ন করার কথা। যেহেতু রোভার স্কাউটরা এ কাজটি করেছে, তাই তাদের কোনো ধরনের সমস্যা হলে বিষয়টি দেখবো।
প্রসংগত, করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ওই ব্যক্তির বাড়ি শহরের চকদেব জনকল্যাণ মহল্লায় বি-ব্লকে। তিনি নিজ বাড়িতে শুক্রবার ভোরে মারা যান। ওই ব্যক্তি ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। গত ১৫ এপ্রিল তিনি নওগাঁয় আসেন। এরপর থেকেই জ্বর-সর্দিতে ভুগছিলেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে বিষয়টি জানার পর নওগাঁ সদর উপজেলা মেডিকেল টিম তার নমুনা সংগ্রহ করে। কিন্তু শুক্রবার ভোরে তিনি মারা যান।
রওশন আলম/জেএম/রাতদিন