ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ১৮তম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী জাকারিয়া বিন হক শুভ। রাজধানীর ভাড়া বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার হয় ২৪ সেপ্টেম্বর। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবিতে বিভিন্ন জায়গায় চলছে বিক্ষোভ, মানববন্ধন। শুভকে নিয়ে রাতদিননিউজের মতামত বিভাগের জন্য ঢাকা থেকে লিখেছেন তাফসীর-ই-খুদা পদক:
ক্লাসে সিনিয়র হলেও সেই ছোটবেলা থেকে বন্ধুর মতই বেড়ে ওঠা আমাদের। স্কাউটিং, বিভিন্ন ফাংশন, খেলার মাঠ থেকে শুরু করে রাতের আড্ডা, আবৃত্তি আর বিতর্ক করতাম একসাথে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পর থেকে শুভকে ফোর্স করতাম বিসিএস এর জন্য, আমাদের মাঝে একজন ক্যাডার দরকার-এই বলে।
করোনার আগেও এগুলো নিয়েই কথা হতো। এলাকা নিয়ে কত কথা, কত রকমের ভাবনা ছিলো আমাদের। আমি হতাশ হয়ে পরলে, ও উল্টো স্বপ্ন দেখাতো আমাকে।
সবশেষ কথা হয়, জছির উদ্দিন শিশু নিকেতনের পিয়ন গোলাপ দাদার চিকিৎসা ফান্ড নিয়ে। ব্যক্তিগত কারণে সেসময় স্যোশালওয়ার্ক ছেড়ে দেয়ার কথা ভাবছিলাম। শুনে রেগে গিয়েছিলো শুভ।
ওর মৃত্যুর পর একরাতে মেসেঞ্জারে আমাদের কয়েক বছরের কথপোকথন পরলাম রাতভর। কত কথা, কত স্বপ্ন, কত রাগ- অভিমান। মাঝে মধ্যে রাগারাগিও হতো। আমি আর ম্যাসেজ দিতাম না। কিন্তু ও ক’দিন পরেই সব অভিমান ভুলে আবার ম্যাসেজ দিতো- ‘ভাই আছিস’ এই লিখে।
বেশ কিছুদিন আগের কথা। তখন আমি রংপুরে থাকি। একবার আমাকে রাতের ঢাকা দেখাবে বলে বারবার ডাকছিলো ওর হলে। ও তখন হলে থাকতো। আমি আসতে পারিনি জন্য রেগে গিয়েছিলো ভীষণ। বেশ কিছুদিন রিপ্লাই দেয়নি মেসেঞ্জারে।
এমন অনেক কথা আমাকে ঘুমাতে দেয়না। ঘুমাতে গেলেই ছবির মতো ভেসে ওঠে গোটা জীবনের জমানো সব স্মৃতি।
ব্যক্তি জীবনে শুভ ছিলো একজন নিখাদ স্বপ্নবাজ মানুষ। নিজে স্বপ্ন দেখতো আর ভালবাসতো অন্যকে স্বপ্ন দেখাতে। ও ছিলো খুবই মোটিভেটেড। দেশসেরা বিতার্কিকদের একজন ছিলো ও। ফলে যুক্তিবিহীন কোন কথাই মানতো না। সেই মানুষটি অযৌক্তিক একটি কাজ করে বসবে, এও কী সম্ভব?
যে ছেলেটা স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসতো, মোটিভেশন দিতো, কাউন্সেলিং করাতো সে কিভাবে এমনটা করতে পারে?
দেশসেরা একজন বিতার্কিক যে কিনা যুক্তি দিয়ে সব বিচার করে সে কিভাবে চলে যায় এভাবে?
আজ ওর বিদায়ে সৃষ্ট শূণ্যতায় কেবল মনে পড়ছে, যাকে সফল মানুষ হিসেবে দেখতে চেয়েছিলাম এলাকায়, তার নিথর মরদেহ বয়ে নিয়ে যেতে হলো আমাকেই।
আল্লাহ মাফ করে দিন, শুভকে কবুল করেনিন । শুভর পরিবারকে ধৈর্য্য ধরার তৌফিক দিন।
শুভ আর ফিরবেনা জানি কিন্তু শুভ’র মৃত্যু রহস্যের সুষ্ঠু তদন্ত যেন হয়। আমরা যেন কোনভাবেই ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত না হই। আমাদের তোলা এই আওয়াজ যেন বিচার নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকে- এই অনুরোধ ও প্রত্যাশায় আগামীর দিকে চেয়ে থাকা।
লেখক: তাফসীর-ই-খুদা পদক, মার্চেন্ট অ্যাকুজিসন অফিসার, দি সিটি ব্যাংক লিমিটেড এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিককর্মী।।