স্বাধীনতার মাসে চলে গেলেন শাহনাজ রহমত উল্লাহ

বরেণ্য সংগীতশিল্পী শাহনাজ রহমত উল্লাহ আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্নাই ইলাইহি রাজিউন। রাজধানীর বারিধারায় নিজ বাসায় শনিবার, ২৩ মার্চ রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি মারা যান।

বিবিসি বাংলাসহ বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, তিনি  হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন। তবে প্রথম আলো অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, গুণী এই শিল্পী শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় মারা গেছেন।

তিনি স্বামী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। তাঁর স্বামী মেজর (অব.) আবুল বাশার রহমত উল্লাহ ব্যবসায়ী, মেয়ে নাহিদ রহমত উল্লাহ থাকেন লন্ডনে আর ছেলে এ কে এম সায়েফ রহমত উল্লাহ এখন কানাডায় থাকেন।

প্রয়াত সুরকার আনোয়ার পারভেজ ও চিত্র নায়ক-গায়ক জাফর ইকবালের বোন শাহনাজ রহমত উল্লাহ ।

তাঁর স্বামী মেজর (অব.) আবুল বাশার রহমত উল্লাহকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, আজ রোববার বাদ জোহর জানাজা শেষে বনানীতে সম্মিলিত সামরিক বাহিনীর কবরস্থানে শাহনাজ রহমত উল্লাহকে দাফন করা হবে।

‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’, ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, ‘আমার দেশের মাটির গন্ধে’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে আমায় বল’, ‘আমায় যদি প্রশ্ন করে’, ‘কে যেন সোনার কাঠি’, ‘মানিক সে তো মানিক নয়’, ‘যদি চোখের দৃষ্টি’, ‘সাগরের তীর থেকে’, ‘খোলা জানালা’, ‘পারি না ভুলে যেতে’, ‘ফুলের কানে ভ্রমর এসে’, ‘আমি তো আমার গল্প বলেছি’, ‘আরও কিছু দাও না’, ‘একটি কুসুম তুলে নিয়েছি’—এ রকম অসংখ্য গান দিয়ে তিনি বাংলাদেশের অগণিত শ্রোতার মন জয় করেছেন।

এই শিল্পী ১৯৯২ সালে একুশে পদক পান। ১৯৯০ সালে ‘ছুটির ফাঁদে’ ছবিতে গান গেয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। এ ছাড়া ২০১৬ সালে ‘চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড’ আয়োজনে আজীবন সম্মাননা, ২০১৩ সালে সিটি ব্যাংক থেকে গুণীজন সংবর্ধনা দেওয়া হয় তাঁকে। এ ছাড়া গান গেয়ে আরও অসংখ্য পুরস্কার আর সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশের গানের জগতে অত্যন্ত পরিচিত একটি নাম শাহনাজ রহমত উল্লাহ। ১৯৫৩ সালে জন্মগ্রহণ করা এ শিল্পী দশ বছর বয়স থেকেই গান শুরু করেন। প্রায় সেই বয়সেই গান করেন চলচ্চিত্র, টেলিভিশন আর বেতারে। খেলাঘর থেকে শুরু করা এ শিল্পীর কণ্ঠ শুরু থেকেই ছিল বেশ পরিণত। গজল সম্রাট মেহেদি হাসানের শিষ্যা হয়েছিলেন তিনি। বাংলাদেশের দেশাত্মবোধক গানের দিকটা ধরতে গেলে সবার আগেই চলে আসে শাহ্‌নাজ রহমত উল্লাহর নাম।

ক্যারিয়ারের ৫০ বছর পূর্তির পরপরই গান থেকে বিদায় নেন তিনি। এ ছাড়া আরও একটি কারণ হলো ধর্মপরায়ণ জীবন বেছে নেওয়া। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘ওমরাহ করে আসার পর আর গান করতে ইচ্ছা করেনি। আমি নামাজ পড়া শুরু করেছি। নামাজ পড়েই সময় কাটছে।’

১৯৬৩ সালে ‘নতুন সুর’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে গান গাওয়া শুরু করেছিলেন শাহনাজ রহমত উল্লাহ। গানের জগতে ৫০ বছরে শাহনাজ রহমত উল্লাহর চারটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে।

এবি/রাতদিন