হাটে ‘হাড়িভাঙ্গা’

সুগন্ধী, সুমিষ্ট ও আঁশহীন আম হাড়িভাঙ্গা। স্বাদের কারণে এর সুনাম বেশ আগেই ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশে। একসময় যে রংপুরকে নির্ভর করতে হতো রাজশাহী অঞ্চলের আমের উপর।

সেই রংপুরেই এখন হাড়িভাঙ্গার উপর নির্ভর করে আমের ‘দ্বিতীয় রাজধানী’ হিসাবে পরিচিত হয়ে উঠছে। আর এই আমকে ঘিরে অসংখ্য মানুষ স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন, সংসারে ফিরছে স্বচ্ছলতা। দিন যতই যাচ্ছে বৃদ্ধি পাচ্ছে হাড়িভাঙ্গা চাষ। পাশাপাশি প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হচ্ছে।

প্রতিবছরই হাড়িভাঙ্গা আমের জন্য অপেক্ষায় থাকেন সাধারণ ক্রেতারা। আর ব্যবসায়ীরাও ভালো ব্যবসা করতে সব প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন আগে থেকেই। অবশেষে সেই অপেক্ষার পালা শেষ হলো। বাজারে এলে পাকা পাকা অতুলনীয় সেই আম। কৃষি তথ্য সার্ভিসের তথ্য মতে, এ বছর ১০ জুনের পর থেকে এই আম পরিপক্ক হবে। সেই দিনক্ষণ মেনেই যেন রংপুরের বাজারে নেমেছে বিভিন্ন আকারের আম। যদিও শুরুতেই দাম কিছুটা বেশি লক্ষ্য করা গেছে।

কৃষি অফিস সূত্র জানা গেছে, এবার রংপুর জেলায় ৩ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে আমের ফলন হয়েছে। এর মধ্যে হাড়িভাঙ্গার ফলন হয়েছে ১ হাজার ৪৫০ হেক্টরে। তবে বাস্তবে হাড়িভাঙ্গার উৎপাদন আরও অনেক বেশি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

সোমবার, ১০ জুন দুপুরের দিকে এ প্রতিবেদক রংপুর মহানগরী টার্মিনাল রোডের আমের পাইকারি বাজার ঘুরে এসেছেন। সেখানে সড়কের উভয় পাশে বিক্রেতার বসেছেন ঝুড়ি ভর্তি হাড়িভাঙ্গা আম নিয়ে। যেগুলোর অনেকটাই পেকেছে গাছে।

হাড়িভাঙ্গার পাশাপাশি সেখানে পাওয়া যাচ্ছে রংপুরে চাষকরা ফজলি, কেরোয়া, এছাহাক তেলি, ছাইবুদ্দিন, আশ্বিনি, সাদা ল্যাংড়া, কালো ল্যাংড়া, কলিকাতা ল্যাংড়া, মিশ্রি ভোগ, গোপাল ভোগ, আম্রপ্যালি, সাদা রচি, চোষাসহ বেশ কয়েক জাতের আমা। যদিও দাপট বেশি হাড়িভাঙ্গার।

আম বিক্রেতা হাসান মিয়া  জানান, বর্তমানে পাকা হাড়িভাঙ্গা আম বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০টাকা কেজি দরে। আর কাঁচা আম বিক্রি হচ্ছে ৮০টাকা কেজি দরে। তবে কেউ কেউ এর চেয়েও কম দামে বিক্রি করছেন।

ব্যবসায়ীরা জানান, আর ক’দিন বাদে পুরোদমে বাজারে আম উঠে এলে দাম কিছুটা কমে যাবে। তবে রংপুর অঞ্চলের বিখ্যাত আমের হাট পদাগঞ্জে আরও কিছুটা কম দামে হাড়িভাঙ্গা বিক্রি হয়ে থাকে।

টার্মিনাল রোডে আম কিনতে আসা জহির চৌধুরী বলেন, ‘মৌসুম শুরুর পর থেকেই হাড়িভাঙ্গার অপেক্ষায় ছিলাম। ঢাকা থেকে ঈদে বাড়ি এসে পেয়ে গেলাম তাজা তাজা হাড়িভাঙ্গা। এ কারণে দাম কিছুটা বেশি হলেও গায়ে লাগছে না’।

আম কিনতে আসা হারুন আর রশিদ নামের আরেকজন বলেন, ‘শুরুতেই ১০০টাকা কেজির দরে বিক্রি করা হচ্ছে আম। হয়তো ক’দিন গেলে আরও দাম বাড়ানো হবে। অথচ শুরুতেই এরকম হওয়ার কথা ছিল না।’

প্রস্তুত পার্সেল সার্ভিস

এদিকে প্রতি বছরের মতো এবারও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হাড়িভাঙ্গা আম পৌঁছে দিতে প্রস্তুতি নিয়েছে বিভিন্ন কুরিয়ার ও পার্সেল সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলো। এগুলোর মাধ্যমে বন্ধু, স্বজনসহ পরিচিতজনের কাছে রংপুর থেকে এ আম পাঠানো হয়। আর এর চাপ সামলাতে কুরিয়ান সার্ভিসগুলো প্রতিদিন অতিরিক্ত গাড়ির পাশাপাশি টার্মিনাল রোডে অস্থায়ী বুকিং অফিস খুলে থাকে। এবারও সেই ব্যবস্থা রেখেছে এসএ পরিবহন, সুন্দরবন কুরিয়ার অ্যান্ড পার্সেল, করতোয়া ও জননী কুরিয়ারসহ বিভিন্ন পার্সেল সার্ভিস।

এইচএ/রাতদিন