সৈয়দপুরে গবাদিপশুকে মেয়াদোত্তীর্ণ ভ্যাকসিন দিতেন ২ মাঠকর্মী!

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের দুই মাঠকর্মীর বিরুদ্ধে গবাদিপশুকে (গরু-ছাগল) মেয়াদোর্ত্তীণ ভ্যাকসিন (টিকা) দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। টিকা দেয়ার সময় ওই দুই মাঠকর্মীকে আটকে রাখেন গবাদিপশুর মালিকেরা।

আজ মঙ্গলবার, ২১ জুলাই উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের অসুরখাই এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে সৈয়দপুর উপজেলা প্রশাসন ও প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

জানা গেছে, উপজেলায় প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের পিপিআর রোগ নির্মূল এবং ক্ষুরারোগ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প এবং ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প চালু রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় গবাদিপশুর অ্যানথ্রাক্স (তড়কা), খুড়া এবং পিপিআর রোগের ভ্যাসকিন দেওয়া হয়ে থাকে। আর উল্লিখিত দুইটি প্রকল্পের আওতায় এ সব ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য সৈয়দপুর উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের একজন করে ইউনিয়ন ভ্যাকসিনেটর এবং একজন করে এলএসপি কর্মরত রয়েছেন। তারা গ্রামে গ্রামে গিয়ে গৃহপালিত গবাদিপশুকে অ্যানথ্রাক্স (তড়কা) খুরা এবং পিপিআর রোগের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করাসহ লালন-পালনে পরামর্শ প্রদান করেন। এ সব ভ্যাকসিন মূলতঃ উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

ঘটনার দিন প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের পিপিআর রোগ নির্মূল এবং ক্ষুরারোগ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প মাঠ কর্মী ইউনিয়ন ভ্যাকসিনেটর মো. সাখাওয়াৎ হোসেন এবং ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের মাঠ কর্মী এলএসপি মোছা. নাজমুন নাহার উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের অসুরখাই গ্রামে ভ্যাকসিন দিতে যান। এর আগের দিন রাতেই স্থানীয় দুইটি মসজিদের মাইক থেকে গরু-ছাগলকে ভ্যাকসিন দেওয়ার বিষয়ে প্রচার করা হয়।

আজ কামারপুকুর ইউনিয়নের অসুরখাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এলাকার গরু-ছাগলকে ভ্যাকসিন দেওয়া কাজ শুরু করেন প্রাণি সম্পদ কার্যালয়ে উল্লিখিত দুইটি প্রকল্পের মাঠ কর্মী। সকাল ৮টায় শুরু করে এলাকার মশিউর রহমান, রজবআলী, আব্দুল জলিল,শরীফ, সুলতান,নাইমসহ এর ১০/১২টি গরুকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। এর এক পর্যায়ে এলাকার জনৈক লতা মতিন নামের এক গৃহকর্ত্রী একটি বাছুর গরু (বকনা) ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেন মাঠ কর্মী সাখাওয়াৎ হোসেন। আর ওই ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর পরই বাছুর গরুটি ছটফট, লাফালাফি করাসহ ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে। এতে গরু মালিকরা হতভম্ব^ হয়ে পড়েন।

এ সময় সেখানে উপস্থিত অপর একটি গরুর মালিক রাশেদুল ইসলামের মনে সন্দেহ উদ্রেক হয়। তিনি প্রাণি সম্পদ কার্যালয়ের মাঠ কর্মী সাখাওয়াৎ হোসেনের নিয়ে আসা ছয়টি ভ্যাকসিনের বোতল হাতে নিয়ে দেখতে পান সবগুলোই মেয়াদোর্ত্তীণ। এ অবস্থায় গরু-ছাগলের মালিকরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন। তারা প্রাণি সম্পদ দপ্তরের দুই মাঠকর্মীকে আটক করে রাখেন।

পরে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. নাসিম আহমেদ এবং উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রাশেদুল হককে বিষয়টি অবহিত করে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, প্রাণি সম্পদ কার্যালয়ের দুই মাঠ কর্র্মীর নিয়ে আসা একটি হটপটের মধ্যে ছয়টি ভ্যাকসিনের বোতল রাখা হয়েছে। তড়কা রোগের প্রতিষেধক টিকার একটি বোতলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। প্রাণি সম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান, মহাখালি, ঢাকা ও কুমিল্লা লেখা রয়েছে। পরিমাণ ১০০ মি.লি। মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ লেখা রয়েছে মে ২০১৫ইং। আরো লেখা রয়েছে টিকার বোতল রেফ্রিজারেটরে (৪ডিগ্রী-৮ডিগ্রী সে. গ্রেড) তাপমাত্রায় রাখা বিধেয়। অথচ তা রাখা হয়েছে একটি ভাত রাখার হটপটের মধ্যে। ছাগলের পিপিআর রোগের ভ্যাকসিনের বোতলে আবার কোন তারিখই উল্লেখ নেই। আর অ্যানথ্রাক্স রোগের ভ্যাকসিনের বোতলের গায়ে সাটানো লেভেল ঘষে তুলে ফেলা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাণি সম্পদ দপ্তরের ইউনিয়ন ভ্যাকসিনেটর মো. সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন,আমাকে সৈয়দপুর উপজেলা প্রাণি সম্পদ কার্যালয় থেকে ভ্যাকসিনগুলো সরবরাহ করা হয়েছে। তবে তিনি উৎপাদন ও মেয়াদোর্ত্তীণের তারিখ না দেখে সে সব নিয়ে এসে দিচ্ছিলেন বলে জানান। তিনি নিজের ভূল স্বীকার করে বলেন গরু-ছাগলকে দেওয়ার আগে ভ্যাকসিনের বোতলের লেভেলে লেখা উৎপাদন ও মেয়াদোর্ত্তীণ তারিখ দেখা উচিত আমার।

সৈয়দপুর উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রাশেদুল হক বলেন, ওই ইউনিয়ন ভ্যাকসিনেটরকে অফিস থেকে কোন ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হয়নি। তিনি আরো জানান, গত দেড় মাস আগেই অফিসে সরবরাহকৃত ভ্যাকসিন (টিকা) শেষ হয়ে গেছে। আমার অফিসের স্টোরে কোন ভ্যাকসিন নেই। ভ্যাকসিনে জন্য আমি চাহিদা দিয়েছি। তবে উদ্ধারকৃত ভ্যাকসিনগুলো সরকারি। ওই মাঠ কর্মী সে সব মেয়াদোর্ত্তীণ ভ্যাকসিন কোথায় পেল কিভাবে পেল তা তদন্ত করে দেখা হবে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের বিরুদ্ধে দাপ্তরিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. নাসিম আহমেদ বলেন, বিষয়টি গুরুতর অপরাধ। ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে বলে জানান তিনি।

জেএম/রাতদিন