ইংরাজি শব্দ ভান্ডার সমৃদ্ধ করার খেলা স্ক্র্যাবল (Scrabble)। যেখানে একেকটি ইংরাজি অক্ষর দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অর্থবহ শব্দ তৈরি করা হয়। যা একটি প্রতিযোগিতায় রূপ নিয়েছে।
জানা গেছে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে খেলাটির প্রচলণের পাশাপাশি অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা। তবে বাংলাদেশে এই খেলাটি এখন পর্যন্ত সেভাবে পরিচিত হয়ে ওঠেনি।
তবে রোববার, ৭ এপিল প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্ক্র্যাবল চ্যাম্পিয়নশিপ-২০১৯ অনুষ্ঠিত হলো। দিনব্যাপি চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হয়েছে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে। আর এর আয়োজন করেছে কালীগঞ্জ কে ইউ পি উচ্চ বিদ্যালয়। আয়োজক বিদ্যালয়টি দাবি করেছে, এর আগে বাংলাদেশে স্ক্র্যাবলের আন্তর্জাতিক কোনো প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়নি।
জানা গেছে, এ চ্যাম্পিয়নশিপে মোট ৪১টি বিদ্যালয়ের ৭৬ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে দুটি বাদে সবগুলো মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়। আর এর মধ্যে নেপালের ৯টি বিদ্যালয়ের ১০জন প্রতিযোগী স্ক্র্যাবল প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
রোববার সকালে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা নেপালী জাতীয় সঙ্গীত এবং নেপালী শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে চ্যাম্পিয়নশিপের উদ্বোধন হয়। পরে উভয় দেশের শিক্ষার্থীরা গান, নৃত্য ও মনমুগদ্ধকর ডিসপ্লে পরিবেশন করে। এসময় উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রবিউল হাসান, ওসি মকবুল হোসেন, আয়োজক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খুরশীদুজ্জামান আহমেদ এবং রাতদিন ডট নিউজের সম্পাদক ও এনটিভির সিনিয়র রিপোর্টার একেএম মঈনুল হক প্রমুখ।
বিকেলে প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্তকার তুলে দেন লালমনিহাটের জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ। আন্তর্জাতিক স্ক্র্যাবল চ্যাম্পিয়নশিপ-২০১৯ এ নেপালের গণেশ সেকেন্ডারি স্কুলের ১০ শ্রেণির শিক্ষার্থী বিরাট সাপকোটা চ্যাম্পিয়ন এবং কালীগঞ্জ কেউপি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আহনাফ মাশফিক রানার্সআপ হয়।
আয়োজকরা জানায়, বছর দুয়েক আগে নেপালের একটি প্রশিক্ষক দল কালীগঞ্জ কে ইউপি উচ্চ বিদ্যালয়ে এসে বদলুল আলম যাদু ও মো. নুরুজ্জামান নামের দুজন শিক্ষককে স্ক্যাবলের প্রশিক্ষণ দেন। এরপর ওই দুই শিক্ষকই জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের স্ক্যাবল প্রশিক্ষণ দেন। পরবর্তিতে গত বছর কেইউপি উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি দল নেপালে গিয়ে স্ক্যাবলের একটি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল কালীগঞ্জে আয়োজন করা হয় স্ক্যাবল চ্যাম্পিয়নশিপ।
বাংলাদেশি প্রতিযোগী করিম আল সাফিন জানায়, স্ক্যাবলের মাধ্যমে নতুন নতুন শব্দ তৈরি করা যায়। ফলে আমরা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অনেক শব্দের সাথে পরিচিতও হতে পারি। নেপালী প্রতিযোগী নিশা ভাট্টারি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে নিজের অনূভুতি প্রকাশ করে এভাবে, ‘এটা একটা অনেক মজার গেম। আর এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশে এসে অনেক ভালো লাগলো।’
আয়োজক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খুরশীদুজ্জামান আহমেদ তাদের আয়োজনের উদ্দেশ্যে সম্পর্কে বলেন, ‘এশিয়ান অলিম্পিকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় স্ক্যাবলের ইভেন্ট আছে। কিন্তু আমাদের দেশে খেলাটির প্রচলন নেই বলে কোনো প্রতিযোগী প্রতিযোগিতাগুলোতে অংশ নিতে পারে না। আর খেলাটির মাধ্যমে ইংরাজি শব্দ ভান্ডার অনেক সমৃদ্ধ করা যায়। মূলত দেশে খেলাটি পরিচিত করতেই আমাদের আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য।
নেপালের অমরসিংহ সেকেন্ডারি স্কুলের শিক্ষক ও নেপালী দলের টিম লিডার কেশব প্রসাদ প্যারাজোলি বলেন, ‘এখনকার ছেলেমেয়েরা ইন্টারনেট ও মোবাইলফোন নির্ভর হয়ে পড়েছে। এর এসবে আসক্ত হয়ে তারা নানাভাবে নিজেদের সময় নষ্ট করছে। অথচ মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে যেকেউ স্ক্র্যাবল খেলতে পারে।’ এদিকে এ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নেপালের সাথে বাংলাদেশের আরও ভালো সম্পর্ক তৈরি হবে বলে মনে করেন তিনি।