রাবেয়া আলীম। র্নিলোভ। নিরহংকারী। সংগঠক। নারীনেত্রী। দুঃসময়েও হাল ছাড়েননি। তাই স্থানীয়দের কাছে তিনি ‘ত্যাগী নেত্রী’।
তিনি নীলফামারী-৪ (সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ) আসনের প্রয়াত সাংসদ আলীম উদ্দিনের সহধর্মিনী। তবে এখন নিজেও সংসদ সদস্য রাবেয়া। তাঁর বাড়ি সৈয়দপুর পৌর শহরে।
সংরক্ষিত নারী আসনে নীলফামারী থেকে তাঁকে মনোনয়ন দেয় আ.লীগ। আর শনিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ সময় ছিল। ফলে একক প্রার্থী হিসেবে তিনি বেসরকারিভাবে নির্বাচিত বলে ঘোষণা করেছেন রির্টানিং কর্মকর্তা।
আ.লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংরক্ষিত নারী আসনে তাঁকে মনোনয়ন দেয়ার পর থেকেই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিলেন পুরো জেলার মানুষ। আর শনিবার নির্বাচিত হওয়ার খবরে সেই খুশি যেন আরো বেড়ে গেছে। স্থানীয়রা বলছেন, এবার অন্তত একজন যোগ্য নারীকে বেছে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
রাবেয়া আলীম নীলফামারী জেলা মহিলা আ.লীগের সভাপতি। জাতীয় মহিলা সংস্থা নীলফামারী শাখার চেয়ারম্যান। পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত তিনি।
তাঁর স্বামী আলীম উদ্দিনে নীলফামারী-৪ আসনের প্রথম সাংসদ। দীর্ঘদিন ছিলেন সৈয়দপুর উপজেলা আ.লীগের সভাপতি। মূলত তার হাত ধরেই রাবেয়ার রাজনীতিতে হাতেখড়ি।
নীলফামারী ও সৈয়দপুরে কর্মরত একাধিক সংবাদকর্মীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, মূলত নীলফামারী জেলায় রাবেয়া আলীমের মাধ্যমে শুরু হয় মহিলা আ.লীগের কার্যক্রম। শুরুতে সাথে পেয়েছিলেন মাত্র তিন-চারজন নারীকে। কিন্তু হাল ছাড়েননি। তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন দলটিকে। দলে যুক্ত করেছেন অসংখ্য সদস্য।
নীলফামারীর সাংবাদিক ভূবন রায় নিখিল বলেন, ‘দিনের পর দিন বাসে চড়ে বাড়ি থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের জেলা শহরে আসতেন রাবেয়া আলীম। আর দলীয় কাজ শেষে ফিরতেন সন্ধ্যায়। এখনো ঠিক একইভাবে তাঁর যাওয়া-আসা।’ প্রায় প্রতিদিনই তাঁকে নীলফামারীতে পাওয়া যায় বলে জানান ওই সংবাদকর্মী।
‘আ.লীগ দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায়, ইচ্ছে করলে তিনি অনেক সুবিধাই নিতে পারতেন কিন্তু তিনি কখনই তা করেননি’-যোগ করে বলেন ভূবন রায় নিখিল।
আ.লীগসহ স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, দলের জন্য ত্যাগের কারণেই তাঁকে এবার মূল্যায়ন করা হয়েছে।
জানা গেছে, রাবেয়া আলীমের স্বামী মারা যান ২০১৫ সালে। এরপরও হাল ছাড়েননি তাঁর স্ত্রী। সংসার সামলেছেন। পাশাপাশি দলীয় কর্মকান্ডও চালিয়ে গেছেন সমানতালে। তিনি তিন মেয়ে ও এক ছেলের জননী।
জাকিয়া তাবাসসুম :
জাকিয়া তাবাসসুম। ডাক নাম জুঁই। পেশায় আইনজীবী। রাজনৈতিক পরিচয়, জেলা যুব মহিলা লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি।
সংরক্ষিত নারী আসনে দিনাজপুর থেকে এবার তাঁকেই মনোনয়ন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তিনিও বেসরকারিভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন।
তাঁর বাবা প্রয়াত অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান ছিলেন বৃহত্তর দিনাজপুর অঞ্চলের সর্বজন শ্রদ্ধেয় একজন মানুষ। রাজনৈতিক জীবনে তিনিও ছিলেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে।
জানা গেছে, কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে সহপাঠি হিসেবে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সহচর।
ভুমিকা রেখেছেন ভাষা আন্দোলনে। মুক্তিযুদ্ধেও সংগঠক হিসেবে ছিল আজিজুর রহমানের অসামান্য অবদান। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার (দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও) সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক নির্বাচিত হন।
মুক্তিযুদ্ধের ৭ নম্বর এবং ৬ নম্বর (আংশিক) সেক্টরে লেফটেনেন্ট জেনারেল পদ মর্যাদায় সিভিল অ্যাফেয়ার্স উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন আজিজুর রহমান। যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিনই কাজ করেছেন দেশ আর রাজনীতির জন্য। ছিলেন র্নিলোভ এবং সৎ ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত।
এ প্রসঙ্গে কথা হয় দিনাজপুরের সাংবাদিক এমদাদুল হক মিলনের সাথে। তিনি বলেন, ‘রাজনীতি আর সাহিত্যঅঙ্গন দুটোতেই সক্রিয় জুঁই। অপরদিকে দেশ ও দলের জন্য আজীবন বাবার ত্যাগ। সবমিলিয়ে এমপি হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে জুঁইকে।’