দিল্লি হাইকোর্টের সাহসী বিচারপতি এস মুরালীধরকে বদলির নির্দেশ দিয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। এর আগে গত সপ্তাহেই পাঞ্জাব-হরিয়ানা হাইকোর্টে বদলির সুপারিশ করেছিল দেশটির সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম। তবে সেই বদলির প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালন করে দিল্লি হাইকোর্টের আইনজীবীরা।
বিচারপতি এস মুরালীধর মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে উত্তর-পূর্ব দিল্লির মুস্তাফাবাদের সংঘর্ষে আহতদের যথাযথ চিকিৎসা সহায়তা দিতে দেশটির পুলিশকে নির্দেশ দেন। এছাড়াও বুধবার সংঘর্ষে গৃহহীন মানুষদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করার রায় দিয়ে দিল্লির মানুষের ‘রক্ষাকর্তায়’ পরিণত হন।
দিল্লি হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশন ‘দ্ব্যর্থহীন ও কড়া ভাষায়’ ওই বিচারপতির বদলির সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে বলেন, এর ফলে প্রতিষ্ঠানটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে কলেজিয়ামের সুপারিশ মেনে বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাতেই বিচারপতি মুরালীধরকে বদলির নির্দেশ দিলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। বুধবার মাঝরাতে এ সংক্রান্ত একটি সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। এতে দিল্লি হাকোর্টে থাকার আর কোনো সুযোগ রইলো না ওই বিচারপতির। এছাড়াও বুধবার রাতে বদলি করা হয়েছে দিল্লির আরও পাঁচ আইপিএস কর্মকর্তাকেও।
ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়ে উত্তর-পূর্ব দিল্লির মুস্তাফাবাদে সহিংসতায় আহতদের স্থানীয় ছোট্ট আল হিন্দ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। অনেক চেষ্টা করেও তাদের বাইরের ভালো কোনো বড় হাসপাতালে ভর্তি করা যায়নি। এ বিষয়ে পুলিশের কোনো সাহায্য না পেয়ে মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিচারপতি মুরালীধরের বাড়িতে যান চিকিৎসক ও মানবাধিকার কর্মীরা।
তাদের আর্জি শুনে রাত পৌনে ২টর সময় দিল্লি পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘এটাই মানুষের কাছে পৌঁছে পুলিশের ভরসা তৈরির সময়।’ বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ে মামলার শুনানিতে সহিংসতায় ঘরছাড়া মানুষের জন্য উপযুক্ত আশ্রয়ের বন্দোবস্ত করারও নির্দেশ দেন তিনি।
বুধবার বিচারপতি মুরলিধর বলেছিলেন, ‘আমরা আরেকটা ১৯৮৪-র মতো ঘটনা হতে দিতে পারি না দেশে।’
এ সহিংসতা নিরসনে কেন্দ্রীয় সরকার ও দিল্লি সরকার উভয়কেই একসঙ্গে কাজ করতে নির্দেশ দেন তিনি।
চার বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র, অনুরাগ ঠাকুর, অভয় ভার্মা ও পরবেশ ভার্মার উস্কানিমূলক ভাষণের ভিডিওকে কেন্দ্র করে দায়ের হওয়া পিটিশনের শুনানিতে বিচারপতি মুরলিধর এ নির্দেশ দিয়েছিলেন।
কেন ওই চার বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়নি জানতে চেয়ে দিল্লির পুলিশ প্রধানকে প্রশ্ন করেছিলেন বিচারপতি মুরলিধর।
জবাবে কেন্দ্রের পক্ষে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা সঠিক সময়েই এফআইআর দায়ের হবে জানালে বিচারপতি পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন, ‘কোনটা সঠিক সময়, মিস্টার মেহতা? দিল্লি তো জ্বলছে।’
দিল্লি হাইকোর্টের বেশ কয়েকজন আইনজীবীর বলেন, বিচারপতি মুরালীধর অত্যন্ত দক্ষ এবং বহু মামলাতেই সাহসী রায় দিয়েছেন। যার মধ্যে কংগ্রেস নেতা সজ্জন কুমারের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ৮৪-র শিখ-বিরোধী দাঙ্গা মামলা এবং সমকামিতাকে ফৌজদারি অপরাধের তকমা থেকে মুক্ত করার রায়।
তারা আরও বলেন, মঙ্গলবার মাঝরাত থেকে বিচারপতি মুরালীধরের ভূমিকার পরে তিনি কার্যত দিল্লির মানুষের ‘রক্ষাকর্তা’ হয়ে উঠলেন।