বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৫২টি মানহীন ও নিম্নমানের পণ্য জব্দ এবং এসব পণ্য বাজার থেকে সরিয়ে ফেলার নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন করা হয়েছে। পণ্যের গুণগত মান উন্নত না হওয়া পর্যন্ত উৎপাদন বন্ধেরও নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে রিটে।
বৃহস্পতিবার সকালে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ভোক্তা অধিকার সংস্থা কনসাস কনজুমার্স সোসাইটির (সিসিএস) পক্ষে জনস্বার্থে সংগঠনের আইন উপদেষ্টা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান রিট করেন।
ওইসব প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট পণ্যসমূহ কেন জব্দ করা হবে না বা বাজার থেকে কেন প্রত্যাহার করা হবে না এবং তাদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারির নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে রিটে।
রিটের বিবাদীরা হলেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) মহাপরিচালক (ডিজি), বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
সম্প্রতি ৪০৬টি পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর ৩১৩টি পণ্যের প্রতিবেদনে ৫২টি কোম্পানির ৫২টি পণ্য নিম্নমানের বলে জানায় বিএসটিআই।
বিএসটিআইয়ের পরিচালক (সিএম) প্রকৌশলী এস এম ইসহাক আলী বলেন, ‘অভিযুক্ত কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে এরইমধ্যে সতর্ক করে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। অচিরেই এসব কোম্পানিতে অভিযান চালানো হবে। এরপরেও যদি পণ্যের গুণগত মান ঠিক না করা হয় তবে এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নিম্নমানের পণ্যে লাচ্ছা সেমাইয়ের মধ্যে প্রাণ, মিষ্টিমেলা, মধুবন, মিঠাই, ওয়েল ফুড, কিরণ, জেদ্দা ও অমৃত ব্র্যান্ড বা কোম্পানির পণ্য নিম্নমানের।
হলুদ গুড়ার ক্ষেত্রে- প্রাণ, কাশেম ফুডের সান, ডেনিশ, ফ্রেস, ডলফিন ও মঞ্জিল ব্র্যান্ডের হলুদ গুড়া নিম্নমানের প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া প্রাণ ও ডেনিশের কারী পাউডারও নিম্নমানের প্রমাণিত হয়েছে।
সরিষার তেলের ক্ষেত্রে- সিটি অয়েল মিলের তীর, শবনব ভেজিটেবল অয়েলের পুষ্টি, বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের রূপচাঁদা ও গ্রিন ব্লিসিং ভেজিটেবল অয়েলের জিবি সরিষার তেল নিম্নমানের বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করে বিএসটিআই।
নিউজিল্যান্ড ডেইরির ডুডলী ব্র্যান্ডের নুডুলসও নিম্নমানের বলে উল্লেখ করা হয় ওই প্রতিবেদনে। এছাড়া এসিআই, মোল্লা, মধুমতি, দাদা সুপার, তিন তীর, মদিনা, স্টারশিপ, তাজ ও নুর স্পেশাল ব্র্যান্ডের আয়োডিনযুক্ত লবণ নিম্নমানের বলে ল্যাব পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়।
রাজধানীর মিরপুরের বনলতা ঘি ও দক্ষিণ গোড়ানের বাঘাবাড়ীর স্পেশাল ঘি, বিএসটিআই এর ল্যাব পরীক্ষায় নিম্নমানের প্রমাণিত হয়েছে।
পানির ক্ষেত্রে- আরা, আল সাফি, মিজান, মর্ণ ডিউ, ডানকান, আর আর ডিউ, দিঘী ব্র্যান্ডের পানিও নিম্নমানের।
এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মক্কা কোম্পানির চানাচুর, চট্টগ্রামের মেহেদী ব্র্যান্ডের বিস্কুট ও রুপসা ব্র্যান্ডের ফারমেন্টেড দই নিম্নমানের বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
বিএসটিআইয়ের পরিচালক ইসহাক আলী বলেন, ‘রমজান মাসে সরিষার তেল, লবণ, হলুদ ও মরিচের গুড়া, লাচ্ছা সেমাই, ঘি ও দই বেশি ক্রয় করে সাধারণ মানুষ। এর বাইরে পানির প্রয়োজন হয়। এসব পণ্য নিম্নমানের হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করতে হয়েছে। আমরা কি খাই প্রতিদিন- এই চিত্র দেখলেই বোঝা যায়। প্রতিবেদনের কপি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।’ অচিরেই এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে জোরালো ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন পরিচালক। সূত্র : বাংলা