পানীয় জলের কল থেকে কিছু দূরে এক মহিলা মাথায় হাত দিয়ে বসে রয়েছেন। আর বছর দুয়েকের একটি শিশু তার পরনের জামা-প্যান্ট খুলে ছুটে গিয়ে কলের পানিতে তা ভিজিয়ে এনে মহিলার মাথায় দিচ্ছে।
আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশকর্মীরা নিজেরা এগিয়ে না এসে শিশুটিকে বলে দিচ্ছেন কী করতে হবে। আবার এই ঘটনার ছবি তুলেতে বাঁধাও দেয় পুলিশ।
শিশুটিকে জিজ্ঞাসা করা হলে আধো উচ্চারণে বলছে, ‘মার জ্বর, তাই জামা-প্যান্ট ভিজিয়ে মাথায় দিচ্ছি।’
নগ্ন অবস্থায় শিশুটিকে এভাবে মায়ের শুশ্রূষা করতে দেখে অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। পরে অবশ্য পুরসভার কর্মীরা এসে মহিলা এবং শিশুটিকে পুরসভার আশ্রয় ভবনে নিয়ে যান।
এই ঘটনা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার প্রতীক্ষালয়ে। করোনার কারণে গৃহ পরিচারিকার কাজ হারাতে হয়েছে ওই নারীকে। স্বামী অন্য মহিলাকে ঘরে তুলেছেন। এই অবস্থায় দুই বছরের পুত্রসন্তানকে নিয়ে কখনও হাসপাতালের প্রতীক্ষালয়ে আবার কখনও সরকারি দপ্তরের বারান্দায় আশ্রয় নিচ্ছেন রেখা সরকার।
পরিস্থিতি এমন যে, তিনি তাঁর সন্তানের মুখে দুবেলা দুমুঠো খাবার তুলে দিতে পারছেন না। গতকাল বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট থেকে জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার প্রতীক্ষালয়ে আশ্রয় নেন রেখাদেবী। কয়েকদিন থেকে ঠিকমতো খাবার না খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।
রেখা সরকার বলেন, কয়েকদিন খেতে না পেয়ে সকাল থেকেই শরীর প্রচণ্ড খারাপ হয়ে পড়ে। পানি আনতে গিয়ে কোতোয়ালি থানার ভিতরে কলের সামনে বসে পড়ি। আমাকে মাটিতে বসে পড়তে দেখে তাঁর দুবছরের পুত্রসন্তান কী করবে বুঝতে পারছিল না। এই পরিস্থিতিতে পাশ থেকে কেউ একজন আমার মাথায় পানি দিতে বলেন। একথা শুনে আমার ছেলে নিজের জামা ও প্যান্ট খুলে পানিতে ভিজিয়ে তা আমার মাথায় দিতে থাকে।
কোতোয়ালি থানা থেকে জানানো হয়, অসুস্থ ওই মহিলা শিশুপুত্রকে নিয়ে থানার প্রতীক্ষালয়ে আশ্রয় নেন। থানার পক্ষ থেকে তাঁদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। পরে পুরসভার হাতে মা ও শিশুটিকে তুলে দেওয়া হয়।
জলপাইগুড়ি পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের সদস্য সৈকত চট্টোপাধ্যায়
রেখাদেবীর সঙ্গে কথা বলেন। পরে তাঁকে পুরসভার আশ্রয় ভবনে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
জলপাইগুড়ি পুরসভার ভবঘুরেদের জন্য যে আশ্রয় ভবন রয়েছে, সেই ভবনে মহিলার থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এবি/রনাতদিন