দেশের সবচেয়ে দূষিত বায়ু নারায়ণগঞ্জে। সেখানকার বায়ুর মান খুবই অস্বাস্থ্যকর। ঢাকা ও গাজীপুরের বায়ুর মান অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় আছে। বায়ুর মানের দিক দিয়ে ভালো অবস্থানে আছে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী।
বরিশাল, রংপুর, সিলেট ও কুমিল্লায় বায়ুর মান সহনশীল অবস্থানে। সাভার, ময়মনসিংহ অঞ্চলের বায়ুর মান সতর্কাবস্থায় রয়েছে বলে এক খবরে জানিয়েছে সাংবাদমাধ্যম প্রথম আলো।
গত ২২ জুন রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পরিবেশ অধিদপ্তরের মিলনায়তনে এক সেমিনারে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বায়ুর মান তুলে ধরেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ কে এম রফিক আহাম্মদ।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে পরিবেশ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনসহ (বাপা) ১০টি সংগঠন ‘বায়ুদূষণ ও করণীয়’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে গত ১৯ জুন এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বা দেশের ১১টি স্থানের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। নিয়মিতভাবে বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তবে এখন আমাদের প্রতিরোধের ভূমিকা নেওয়ার সময়ে এসেছে।’
এ কে এম রফিক আহাম্মদ বলেন, ‘দেশের প্রায় ৭১ শতাংশ ইটভাটাকে আমরা পরিবেশবান্ধব করেছি বা কম দূষণের তালিকায় নামিয়ে আনতে পেরেছি। দেশের ৩৩টি জেলায় এখন পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয় আছে। প্রতিটি জেলায় পরিবেশ আদালত আছে। তবে এটা ঠিক, আমাদের আরও কাজ করার আছে।’ তিনি বলেন, বায়ুদূষণের বিষয়ে মানুষকেও সচেতন হতে হবে।
তবে জনসচেতনতা দিয়ে পরিবেশ রক্ষা হবে না বলে মনে করেন সেমিনারের প্রধান অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক। তিনি বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষা করার দায়িত্ব মূলত সরকারের। পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে। কারণ, সরকার অনেক ব্যাপারে নির্লিপ্ত থাকে। বায়ুদূষণে আজ অবস্থা হয়েছে এমন, আমরা কি টিকে থাকব, না আমরা ধ্বংস হয়ে যাব। এটা শুধু বাংলাদেশের নয়, সারা বিশ্বের সমস্যা।’
সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে বাপার সহসভাপতি ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে শহরগুলো পরিত্যক্ত হয়ে যাবে। সরকার সবকিছুই জানে কারা এই দূষণ করছে। কিন্তু সব জানার পরও কেন দেশের বায়ুদূষণ বন্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
বায়ুদূষণ রোধে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমগুলোকে আরও শক্তিশালী করা উচিত বলে মনে করেন বাপার সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মতিন। তিনি বলেন, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরের আরও শক্তিশালী হওয়া উচিত। কারণ, যারা বায়ুদূষণের জন্য দায়ী, তারা আরও অনেক শক্তিশালী।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৬ সালের একটি প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে তিনি সেমিনারে বলেন, প্রতিবছর বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশের প্রায় ১ লাখ ৯৫ হাজার মানুষ মারা যায়। মানুষের মৃত্যুর ১০টি কারণের মধ্যে পঞ্চম অবস্থানে আছে বায়ুদূষণ। দেশের বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ প্রায় আট হাজার ইটভাটা।
এইচএ/রাতদিন