কানাডার নাগরিক জেরাল্ড কটন। দেশটির কোয়াড্রিগা নামের একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও মালিক। ভারতের জয়পুরে একটি অনাথ আশ্রমে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে এসে গত ডিসেম্বরে হঠাৎ মারা যান তিনি। মাত্র তিরিশ বছর বয়সেই।
তাঁর মৃত্যুতে বিপাকে পড়েছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ১ লাখ পনেরো হাজার গ্রাহক। কারণ তাঁদের টাকার এক মাত্র চাবিকাঠি অর্থাৎ ‘পাসওয়ার্ড’ ছিল জেরাল্ডের কাছেই। এই টাকা রাখা ছিল প্রযুক্তি দুনিয়ার আধুনিকতম মুদ্রা ‘ক্রিপটোকারেন্সি-র মাধ্যমে। ফলে কানাডার কেন্দ্রীয় সংস্থার কাছেও এই টাকার কোনও খোজ নেই।
কোয়াড্রিগাতে বিটকয়েন, লাইটকয়েন আর এথেরিয়াম নামের তিন ধরনের ‘ডিজিটাল মুদ্রা’ লেনদেনের ব্যবস্থা ছিল।
আইনি জটিলতা থেকে বাঁচতে দেশটির সুপ্রিম কোর্টের কাছে দ্বারস্থ হয়েছেন জেলাল্ডের স্ত্রী। তিনি আদালতকে জানান, এই ব্যবসা সম্পর্কে তিনি কিছুই জানতেন না এবং কোনও পাসওয়ার্ডও নেই তাঁর কাছে।
বিশেষজ্ঞদের মত, পাসওয়ার্ড ছাড়া কোনও ভাবেই ঢোকা যায় না ক্রিপটোকারেন্সি অ্যাকাউন্টে। তাই আপাতত ধরে নেয়া হচ্ছে ১০০০ কোটি টাকা হয়তো জলেই গেল।
গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, সুরক্ষার জন্য কোম্পানির সব অ্যাকাউন্টের শেষতম পাসওয়ার্ড ছিল জেলাল্ডের কাছে। সেই পাসওয়ার্ড রাখা ছিল কানাডায় তাঁর ব্যক্তিগত কম্পিউটারে। তাঁর প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক ৩ লাখ ৬৩ হাজার। যাদের মধ্যে ‘ক্রিপটোকারেন্সি’তে টাকা রেখেছিলেন প্রায় ১ লাখ পনের হাজার গ্রাহক। যার আমানতের পরিমাণ প্রায় এক হাজার কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা লেনদেনের বর্তমান ব্যবস্থা খুব তাড়াতাড়ি অতীত হয়ে যাবে এমন ধারণা থেকেই জন্ম নেয় ‘ক্রিপটোকারেন্সি’।
ক্রিপটোকারেন্সি হলো ভার্চুয়াল টাকা, যার কোনও শরীরী অস্তিত্ব নেই। এই আর্থিক ব্যবস্থায় বাংলাদেশের কেন্দ্রিয় ব্যাংক বা আমেরিকার ফেডারেল ব্যাংকের মতো কোনও নিয়ন্ত্রক সংস্থা নেই।
যে কোনও দুই সংস্থা বা ব্যক্তির ক্রিপটোকারেন্সি অ্যাকাউন্ট থাকলে তাঁরা কোনও নগদ ছাড়াই নিজেদের মধ্যে ক্রিপটোকারেন্সি লেনদেন করতে পারেন। এই অ্যাকাউন্ট আছে এমন দোকান থেকে ক্রিপটোকারেন্সি অ্যাকাউন্ট থাকলে সেখান থেকে পটোকারেন্সিতেই জিনিসপত্র কিনতে পারেন গ্রাহকেরা।
নিয়ন্ত্রণমুক্ত এই পদ্ধতির পক্ষে দীর্ঘ দিন ধরেই যুক্তি দিয়ে আসছেন পৃথিবীর প্রযুক্তিবিদদের একাংশ। তাদের যুক্তি, এই ব্যবস্থায় প্রতিটি লেনদেন যে ভাবে ডিজিটাল ব্লকের মাধ্যমে চিহ্নিত করা থাকে, সেই ‘ব্লকচেন’ ভেদ করা প্রযুক্তিগত ভাবে অসম্ভব।
যদিও এই ‘অশরীরী মুদ্রা’ নিয়ে এখনও সন্দিহান উন্নত অনেক দেশ এবং কোম্পানিগুলো। সে কারণে প্রযুক্তি ব্যবহারে এগিয়ে থাকা আমাজন এখনও তাঁদের কোম্পানিতে লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে ক্রিপটোকারেন্সি চালু করেনি।
তবে ‘কোয়াড্রিগা’ সংস্থার এই বিপর্যয়ের ঘটনা নতুন করে প্রশ্ন তুলছে ‘ক্রিপটোকারেন্সি’ আর্থিক ব্যবস্থার বিপদ নিয়ে। সূত্র : আনন্দবাজার