হাতীবান্ধায় আ.লীগের মহড়ায় ‘শিবির ক্যাডার’, সাংবাদিককে বেধড়ক মারধর

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় আ.লীগের বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসময় এক পক্ষে থাকা এক সময়ের আলোচিত ‘শিবির ক্যাডার’ ও কয়েকজনের হামলায় গুরতর আহত হয়েছেন দৈনিক মানবকন্ঠের লালমনিরহাট প্রতিনিধি আসাদুজ্জামান সাজু। মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১০ মার্চ প্রথম ধাপে হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার মধ্য দিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয় আ.লীগ মনোনীত পরাজিত প্রার্থী লিয়াকত হোসেন বাচ্চু ও জেলা আ.লীগের যুগ্ম সম্পাদক আরেক পরাজিত প্রার্থী সরওয়ার হায়াত খানের মধ্যে। এরই জেরে গত সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলা দলীয় কার্যালয়ে ওই দুইজনের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

এই অবস্থায় মহান স্বাধীনতা দিবসে ওই দুই পক্ষ নিজেদের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে শো ডাউন করে পৃথকভাবে হাতীবান্ধা কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারে পুষ্প্যমাল্য অর্পন করেন। পরে সেখান থেকে ফেরার পথে বন্দর এলাকায় দুই পক্ষ মুখোমুখি হলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে পুলিশি হস্তক্ষেপে অল্প সময়ের মধ্যে সেখান থেকে দুই দিকে চলে যায় দুই পক্ষ।

সেখান থেকে লিয়াকত হোসেন বাচ্চুর অনুসারীরা টংভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের আহবায়ক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম হোসেনের নেতৃত্বে মেডিকেল মোড়ের দিকে ফিরছিল। সেখানে থাকা বেশকিছু লোকজন লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র বহনের পাশাপাশি নানা ধরণের উস্কানীমূলক শ্লোগান দিচ্ছিলেন।

এসএস সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে তাদের এ মহড়ার ছবি তুলতে গেলে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান সাজুর উপর হামলা চালায় সেলিম হোসেনের খালাতো ভাই ও রংপুর কারমাইকেল কলেজের এক সময়ের ‘শিবিরের ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত সদরুল আমিন রিপন ও তার ছোট ভাই খোকন এবং সিরাজুল নামের এক ব্যক্তি। এসময় ওই সাংবাদিককে বেধড়ক পিটিয়ে ক্যামেরা ভাংচুর করা হয়। তাদের হাত থেকে সাজুকে রক্ষা করতে গিয়ে শরীফ মোল্লা নামের স্থানীয় একজন দলিল লেখকও মারধরের শিকার হন।

হামলাকারীরা সেখান থেকে চলে যাওয়ার পর স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় সাজু ও শরীফকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। বিকেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ওই সাংবাদিককে পাঠানো হয় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

জানা গেছে, হাতীবান্ধা উপজেলার গোতামারী এলাকার বাসিন্দা সদরুল আমিন রিপন এলাকায় শিবির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। তবে তার খালাতো ভাই ও কিছুদিন আগে আ.লীগে যোগ দেয়া সেলিম হোসেনের তৎপরতায় রিপনও সাম্প্রতিক সময়ে আ.লীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। ফলে এই মহড়ায় তাকেও দেখা যায়।

সাংবাদিক আসাদুজ্জামান সাজু বলেন, ‘ছবি তোলার জন্য ক্যামেরা বের করতেই শিবির ক্যাডার রিপনসহ তিনজন আমাকে মারধর শুরু করে। রিপন লাঠি দিয়ে পেটাতে পেটাতে বলতে থাকে, ‘‘এখন আর শিবির করি না, আওয়ামী লীগ করি। তোকে আজ মেরেই ফেলবো’’।

দুপুরে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাজু জানান, ওই ঘটনার পর তার আর কিছু মনে নেই। পরে তিনি জানতে পারেন মারধরের কারণে সেখানেই তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। আর হাসাপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পর জ্ঞান ফিরে আসে।

হাতীবান্ধা থানার ওসি ওমর ফারুক সাংবাদিক সাজুর খোঁজখবর নিতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন জানিয়ে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দুগ্রুপের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার পর বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’ সাংবাদিককে মারপিটের ঘটনাটি দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

এদিকে সাংবাদিক সাজুর হামলার ঘটনায় লালমনিরহাটসহ জেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন। তারা দ্রুত দোষিদের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন। তা না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারী দিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা।

সাংবাদিকদের নিন্দা : সাংবাদিক আসাদুজ্জামান সাজুর ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন লালমনিরহাট জেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা। তারা দ্রুত দোষিদের গ্রেফতারের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন।

প্রতিবাদ সমাবেশ : আসাদুজ্জামান সাজুর উপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল বুধবার, ২৭ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টায় হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের সামনে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছে হাতীবান্ধা প্রেসক্লাব। এতে জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের অংশগ্রহণের আহবান জানানো হয়েছে।