আকলিমাকে গণধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়

নীলফামারীর সৈয়দপুরে গৃহবধূ আকলিমা হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন হয়েছে। গণধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে আকলিমাকে হত্যা করা হয়েছে এবং হত্যার পর ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে সুইসাইড নোট লিখে রাখা হয়েছিল। এই ঘটনায় অভিযুক্ত ২ আসামিকে আটক করেছে পুলিশ।

শনিবার, ২৯ আগস্ট দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান (বিপিএম পিপিএম)।

তিনি জানান, গত ২৩ আগস্ট সকালে সৈয়দপুর উপজেলার কামার পুকুর ইউনিয়নের মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের পিছনে বৈদ্যুতিক টাওয়ারের নিচ থেকে আকলিমার (২৫) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সে পার্শ্ববর্তী কিশামত কামারপুকুর গ্রামের মৃত আবেদ আলীর মেয়ে। মরদেহের সঙ্গে একটি চিরকুট পাওয়া যায়, যাতে তার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয় বলে উল্লেখ করা ছিল। মরদেহের গলায় রশির দাগ ও জব্দকৃত আলামত পর্যালোচনা করে প্রাথমিকভাবে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা করা সম্ভব হয়নি। আকলিমার মা মমতাজ বেগম ওইদিন রাতে আকলিমার স্বামী শরিফুল ইসলামকে সন্দেহ করে তার নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ সুপার জানান, আকলিমার স্বামী পরকীয়া প্রেমে আসক্ত ছিলেন এবং প্রতিদিনই আকলিমাকে মারপিট করতো। ২২ আগস্ট তিন সন্তানকে নিজের কাছে রেখে আকলিমাকে বাসা থেকে বের করে দেয় তার স্বামী। বাবার বাড়িতে স্থান না পেয়ে রাতে রাস্তায় স্থান নেয়। বিপর্যস্ত আকলিমাকে দেখে খাবার ও টাকা দিয়ে সাহায্যের কথা বলে রাতে মৎস্য খামারের কাছে নিয়ে গিয়ে কামারপুকুর এলাকার আনোয়ারুল ইসলাম, মো. শুভ ও মো. হৃদয় তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পাশবিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাধা দেয় আকলিমা। বাধা দেওয়ায় আনোয়ারুল ও শুভ মাছ ধরার রশি দিয়ে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে।

আনোয়ারুল তার নিজ হাতে একটি ডার্বি কোম্পানির সিগারেটের রাংতায় সুইসাইড নোট লিখে তা আকলিমার কোমরে গুঁজে দিয়ে হত্যাকাণ্ডটিকে আত্মহত্যা হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার কৌশল গ্রহণ করে।

এঘটনায় পুলিশ অভিযুক্ত আনোয়ারুল ও শুভকে গ্রেফতার করেছে। অপর আসামি মো. হৃদয় পলাতক রয়েছে। এছাড়াও এজাহারে সন্দিগ্ধ আকলিমার স্বামী শরিফুল ইসলামকে (২৮) আটক করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।আটক আনোয়ারুল ও শুভ বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

পুলিশ সুপার মোখলেছুর রহমান আরও জানান, মরদেহের সঙ্গে থাকা চিরকুটের লেখার সাথে আকলিমা ও তার স্বামীর হাতের লেখার মিল না পাওয়ায় পুলিশ অধিকতর তদন্ত শুরু করে। ঘটনাস্থলে রাখালের বেশে পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত হয়ে ডার্বি সিগারেট খায় এমন প্রয় ৬০/৭০ জনকে শনাক্ত করে। হাতের লেখা মিলে যাওয়ায় আনোয়ারুলকে আটক করে পুলিশ। এরপরই বেরিয়ে আসে গৃহবধূ আকলিমাকে নির্মমভাবে হত্যারে আসল ঘটনা।

এনএ/রাতদিন