রংপুরের `ছাওয়াল’ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আর নেই। সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে জায়গা করে নিয়েছেন এই রাজনীতিবিদ। তাঁর মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে তারই ‘আতুর ঘর’ রংপুর।
দল-মত নির্বিশেষে সবার চোখ এখন অশ্রুসিক্ত। দীর্ঘদিনের অভিভাবককে হারিয়ে আহাজারি থামাতে পারছেন না তাঁর (জাতীয় পার্টি) দলের নেতা-কর্মী থেকে সমর্থকরাও।
রোববার, ১৪ জুলাই সকালে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সাবেক সেনা প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে রংপুর মহানগরীর সেন্ট্রাল রোডের দলীয় কার্যালয়ে বাড়তে থাকে নেতাকর্মীদের ভিড়। সেখানে জাতীয় ও দলীয় পতাকার সঙ্গে উড়ছে কালো পতাকা।
ঘড়ির লম্বা সেকেন্ডের কাটার মত দূর দূরান্ত থেকে অনবরত আসতে থাকে লোকজন। মুহূর্তেই হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণ হয় সেখানে। কান্নায় ভেঙে পড়েন সবাই। চাপা কান্নাও যেন বাঁধ ভেঙে প্রিয় মানুষটিকে হারানোর চিৎকারে প্রকম্পিত হয়।
দলীয় কার্যালয়ের মতোই পুরো রংপুর জুড়ে এরশাদ ভক্তদের শোকাবহ হৃদয় এখন কালো মেঘে আচ্ছন্ন। তার এই মৃত্যুতে রংপুরবাসী অভিভাবকহীন হলে পড়ল বলেও মন্তব্য করেছেন দলের সিনিয়র নেতারা।
আর অন্য দলের নেতারা বলছেন, এরশাদের জীবদ্দশার কর্মকাণ্ডই তাকে মূল্যায়ন করবে।
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আব্দুল বারী। দলীয় প্রধানের সঙ্গে একই মঞ্চে বহুবার বক্তব্য রেখেছেন তিনি। কত কথা বলেছেন প্রিয় নেতার পাশে বসে। সেই নেতাকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ তিনি।
আবেগ তাড়িত হয়ে তিনি বলছিলেন, রংপুরসহ সারা দেশে রাজনীতিতে এরশাদ ছিলেন অপ্রতিরোধ্য নেতা। তার উন্নয়ন ও জনকল্যাণমূখী ভাবনাই তাকে এদেশের মানুষের মাঝে বাঁচিয়ে রাখবেন।
এরশাদের হাত ধরে তৃণমূল থেকে রাজনীতির মঞ্চে সফলতার দেখা পেয়েছেন মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তিনি এখন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য, রংপুর মহানগরের সভাপতি ও রংপুর সিটি মেয়র। কান্না জড়িত কণ্ঠে মোস্তফা বলেন, ‘আজ আমার পিতাকে হারালাম। আমার জীবনের পরম অভিভাবক ছিলেন। তাঁকে প্রস্থানের পরও মানুষ আজীবন মনে রাখবে।
তিনি বলেন, স্যার সব সময়ই দেশের জন্য চিন্তা করতেন। রংপুরের মানুষের কথা বলতেন। আজ স্যার নেই। রংপুরের মানুষ একজন অভিভাবককে হারালো।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জানাজা মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই বাদ জোহর রংপুরে অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকায় তাঁকে দাফনের সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও রংপুরের সর্বস্তরেরর মানুষ চাইছেন রংপুরই হোক এরশাদের শেষ ঠিকানা।