ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ১৮তম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী জাকারিয়া বিন হক শুভ। রাজধানীর ভাড়া বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার হয় ২৪ সেপ্টেম্বর। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবিতে বিভিন্ন জায়গায় চলছে বিক্ষোভ, মানববন্ধন। শুভকে নিয়ে রাতদিননিউজের মতামত বিভাগের জন্য রংপুর থেকে লিখেছেন ছড়াকার ইরশাদ জামিল:
‘শুভ নেই! এক অশুভ শক্তি ঘিরে রেখেছে আমাদের’। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় শুভর বড় বোনের মামলা নিয়ে পুলিশের যে গড়িমসি ভূমিকা তা জানার পরে যথার্থ বলেছিলেন, বড় ভাই সাংবাদিক তিতাস আলম।
শুভ হত্যার বিচার হতেই হবে। বিচার হওয়াটা খুবই জরুরী। জনগনের আস্থার জায়গাটা আজ পেন্ডুলামের মতো দোদুল্যমান।
মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ঢাকায়, ঢাকার বাইরে মানববন্ধন করে সুষ্ঠু তদন্ত ও শুভ হত্যার বিচার চেয়েছেন। ঘটনা দিনের আলোর মতোই পষ্ট। অথচ পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে চিৎকার, আহাজারি কারও কানেই পৌঁছাচ্ছে না। সাধারণত মানুষ যখন কোন ঘটনার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে তখন সকলেরই উচিৎ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সেই ঘটনার প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো। সাধারণ মানুষকে আস্বস্ত করা যে, ‘আমরা আপনাদের পাশে আছি। আইন তার নিজের গতিতে চলছে, আইন সবার জন্য সমান’। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি আমাদের আস্থার জায়গাটা দিনদিন চরম হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছে।
শুভর সম্পর্কে আমি চাচা হই। শুভর বড় বোন হাসিনা পারভিন শিল্পি আমার ক্লাসমেট। আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর আগের কথা। তখন ওরা অনেক ছোট। পেশাগত কারণে আমি দীর্ঘদিন এলাকার বাইরে ছিলাম। শুভর সঙ্গে আমার এলাকার অন্য সবার মতো উল্লেখ করার মতো সেরকম সম্পর্ক গড়ে উঠেনি।
মাঝেমধ্যে দেখা যে হয়নি তা নয়, সেটা ছিল কুশলবিনিময় পর্যন্ত। কিন্তু আমি শুভকে চিনতাম অন্যভাবে–শুভর গল্প শুনতাম আমার বড় ভাইয়ের ছেলে পদকের কাছে। আজ সেই গল্পের পুনরাবৃত্তি শুনছি সাধারণ মানুষের মুখেমুখে।
এই বয়সের একটা ছেলেকে নিয়ে মানুষের এতএত আশা! এতএত বিশ্বাস! এতএত ভালোবাসা! এটি অবাক হওয়ার মতো। অবিশ্বাস্য রকম কিন্তু সত্যি। মানুষের জীবনে এর চেয়ে বড় অর্জন আর কী হতে পারে!
আমি শুভর মৃত্যুর দিন থেকে আজঅব্দি ফেসবুকে প্রায় প্রতিটি পোস্ট মনোযোগ দিয়ে পড়ার চেষ্টা করছি। গত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখ তুষভান্ডারে শুভ হত্যার বিচার চেয়ে মানববন্ধনে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখেছি এবং তাদের শুভ সম্পর্কে অনুভূতি শুনেছি। যার সারসংক্ষেপ এরকম, শুভ ছিল নিখাঁদ স্বপ্নবাজ একজন মানুষ, স্বপ্ন দেখতো –দেখাতো, খুবই মোটিভেটেড ছেলে, সৃজনশীল, সাহিত্যমনা, দেশসেরা বিতার্কিকদের একজন, যুক্তিবিহীন কোন কথাই কক্ষনও মানতো না।
এরকম একটি ছেলে আত্মহণনের পথ বেছে নেবে?
না, এটা কারুরই বিশ্বাসযোগ্য হওয়ার কথা নয়। আমিও বিশ্বাস করি না।
শুভর বন্ধুরা যারা মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর সরজমিনে ঘটনাস্থল দেখেছেন তারা সবাই প্রায় একই রকম সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। আমরা তার বন্ধু রিয়াদ আল সাহাফের বক্তব্য থেকে সেগুলো জানতে পারি–
১. শুভ যদি আত্মহত্যাই করবে তাহলে দরজা খোলা রাখবে কেন?
২. শেন (শুভর স্ত্রী) একাই ছুরি দিয়ে ওড়না কেটে লাশ নামায়। ৮৫–৯০ কেজি একজন মানুষকে কোলে তুলে একা নামানো কী করে সম্ভব! ওড়না কেটে দিলে লাশটা ধুপ করে নিচের বিশাল খাটে পড়ার কথা। তাহলে লাশটা ফ্লোরে পড়ল কীভাবে?
৩. এত ভারী একটা দেহ টাইলসের ফ্লোরে পড়লো, মাথা বা হাতে-পায়ে জখম হলো না!?
৪. লাশ নামিয়ে হাসপাতালে না নিয়ে দীর্ঘক্ষণ বাসায় বসে থাকা হলো কেনো?
৫. স্বামী ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে, স্ত্রী দেখে চিৎকার করে পড়ে যাবার কথা। পাশের ফ্ল্যাটের লোকজন জানলো না! বাসার দারোয়ান জানলো না। একা একা লাশ নিয়ে মা-বোনের জন্য বসে ছিল কেন? এত ঠান্ডা মাথা এরকম অবস্থায়!
৬. লাশ বাসা থেকে হাসপাতালের মর্গ, আল-মারকাজুল ইসলাম মসজিদে গোসল করানো, জানাজা সব মিলিয়ে প্রায় ১৭ ঘন্টা মোহাম্মদপুর এলাকাতেই ছিল। স্ত্রী পক্ষের একজনও হাসপাতাল বা জানাজায় আসলো না?
৭. লাশের গলার উপরের দিকে শ্বাসনালীর দুই পাশে দুইটা স্পষ্ট দাগ ফাঁসির দাগ নাকি গলা টিপে ধরার?
আমি শুধু এটুকুই বলবো, দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার আগে সতর্ক হয়ে যাওয়া জরুরী। অশুভদের শিকড় কোথায়?
চাই অধিকার, ন্যায্য বিচার।
আজকে এসব পাপের ন্যায্য বিচার আদায় ছাড়া নড়বো না একচুলও// চাই না হারাক এইভাবে আর একটি কুড়ি, ফুলও।
শুভর আত্মার শান্তি কামনা করছি।
লেখক: ইরশাদ জামিল, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ও ছড়াকার