কালীগঞ্জে এক মাদ্রাসার সব পরীক্ষার্থীই ভুয়া!

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার বৈরাতি দাখিল মাদ্রাসা থেকে এ বছর ২২জন শিক্ষার্থী জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা থাকলেও পরীক্ষা শুরুর দিনই অনুপস্থিত ছিল ৬ জন। আর বুধবার, ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাড়িয়েছে ১২জনে।

অভিযোগ উঠেছে এসব পরীক্ষার্থীর সবাই ভুয়া। অনুপস্থিত ১২জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২জনকে ইতোমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে ভুয়া হিসেবে।

জানা গেছে, চলতি বছরের ২ নভেম্বর থেকে সারা দেশে জেডিসি পরীক্ষা শুরু হলে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার বৈরাতি দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য প্রবেশপত্র সংগ্রহ করে। উপজেলার কাকিনাহাট মোস্তাফিয়া কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্র থেকে প্রতিষ্ঠানটির ছাত্র-ছাত্রীরা পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। কিন্তু পরীক্ষা শুরুর দিনেই ওই মাদ্রাসার ৬জন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল।

বাকী শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিতে এলে পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তার চোখে শিক্ষার্থীদের অনেকের বয়সের বিষয়টি ধরা পড়ে। এরপর তিনি তাৎক্ষনিকভাবে বিষয়টি তার নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে জানতে পারেন, প্রতিষ্ঠানটির হয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয়া অনেকেই বিভিন্ন স্কুলও কলেজ থেকে আসা ছাত্র-ছাত্রী।

এদের মধ্যে কালীগঞ্জ উপজেলার বাবর আলী উচ্চ বিদ্যালয় ১০ম শ্রেনীর ছাত্রী সিতুলী বেগম জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। জেডিসি পরীক্ষায় তার রোল নম্বর ২৩৮৭৮৪। আরেক ছাত্রী আফসিন খাতুন । তিনি করিম উদ্দিন পাবলিক ডিগ্রী কলেজ থেকে ২০১৮ সালে এইচ.এস.সি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৩.৪৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তিনিও জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। আফসিন খাতুনের রোল নম্বর ২৩৮৭৮৬।

ওই দিন থেকেই বাকী শিক্ষার্থীরা বিষয়টি আচ্ করতে পেরে ওই ২ শিক্ষার্থীসহ আরো ৪ শিক্ষার্থী বাকি পরীক্ষাগুলোতে অনুপস্থিত রয়েছে ।

অনুসন্ধানকালে জানা গেছে, বৈরাতি দাখিল মাদ্রাসার সুপার ফাতেমা বেগম ও তার স্বামী আবুল কাশেম এসব ঘটনার সাথে জড়িত রয়েছেন।

১৯৯৭ সালে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করে এখন পর্যন্ত ১৭জন শিক্ষককে নিয়োগ দিয়েছেন সুপার । আর এসব শিক্ষকদের প্রত্যেকের নিকট থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অংকের টাকা ।

বুধবার, ১৩ নভেম্বর সরেজমিন গিয়ে বৈরাতি এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, দুই তিন বছর থেকেই মাদ্রাসাটি বন্ধ রয়েছে । জরাজীর্ণ মাদ্রাসাঘরটির ভিতরে বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় বখাটেরা জুয়ার খেলার আসর বসান ।

স্থানীয় বাসিন্দা সমসের আলী (৬৫) জানান, মাদ্রাসাটি প্রথম প্রথম কিছুদিন চলছিল । অনেকদিন থেকে বন্ধ রয়েছে। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, ‘এটি তৈরী হয়েছে জুয়া খেলার জন্য ।’ এসময় উপস্থিত শহিদুল ইসলাম (৪২) সহ অনেকেই একই কথা বলেন ।

সিতুলী বেগমের মা সাদেকা বেগম (৪৫) এর সাথে কথা হলে তিনি অকপটে সিতুলী বেগমের জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, মেয়েকে ৫’শ টাকা দিয়ে আবুল কাশেম পরীক্ষায় অংশ নিতে বলেন। তিনি বুঝতেও পারেননি যে এটা অন্যায়।

এ ব্যাপারে বৈরাতী দাখিল মাদ্রার সুপার ফাতেমা বেগমের সাথে সেলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অসুস্থ হয়ে রংপুরে অবস্থান করছেন জানিয়ে মোবাইল কেটে দেন।

কাকিনাহাট মোস্তাফিয়া কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রের সচিব মোঃ সাহেদার রহমান বলেন, শারীরিক গঠন দেখে প্রথমে সন্দেহ হয় । এরপর বিষয়টি কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তাসহ উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানো হয় ।

কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও কালীগঞ্জ একাডেমিক সুপারভাইজার মোঃ জাকির হোসেন বলেন, ‘তাদের মধ্যে ২জন যে ভুয়া পরীক্ষার্থী এতে কোন সন্দেহ নেই। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েছি।’

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পরীক্ষা কমিটির সভাপতি মোঃ রবিউল হাসান বলেন, বয়স প্রমানের জন্য ওই মাদ্রাসা থেকে জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া সকল শিক্ষার্থীর পিএসসি পরীক্ষার সদনসহ প্রমানাদি নিয়ে ১২নভেম্বর সুপারকে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। তিনি আসেননি। বুধবার, ১৩ নভেম্বর তাকে আবারও চিঠি দেয়া হয়েছে।

সঠিক কাগজ পত্র প্রদর্শনে ব্যর্থ হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি ।