লালমনিরহাটে এক মাংস ব্যবসায়ীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-র বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুই ব্যবসায়ী। অপর একজনকে আটক করে ছেড়ে দিয়েছে বিজিবি।
আজ বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর সকাল ৯ টার দিকে জেলার পাটগ্রাম উপজেলার তিনবিঘা করিডোর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে , বিজিবি’র ‘লাইনম্যান’কে গাড়ি প্রতি নির্দিষ্ট হারে টাকা দিয়ে প্রতিদিন দহগ্রাম ইউনিয়ন থেকে গরুর মাংস নিয়ে আসেন পাটগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ব্যবসায়ীরা। ঘটনার দিন ৪ ভ্যান মাংস গেট দিয়ে পার করতে বিজিবি’র লাইনম্যান নামে পরিচিত মইনুল ইসলাম ওরফে বাঘা ও ওসমান আলী ১৫ হাজার টাকা দাবি করেন।
পরে পানবাড়ি ইউনিয়নের পাবনাপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী সোহরাব আলী ও তাঁর ছোট ভাই ইদ্রিস আলী এক ভ্যান মাংসের জন্য দুই হাজার টাকা দেন লাইনম্যান ওসমানকে। টাকা নেওয়ার পরও ওই দুই লাইনম্যান ও তিনবিঘা করিডোর চেকপোস্টে দায়িত্বরত ৪ বিজিবি সদস্য টাকা পাননি জানিয়ে মাংসের গাড়ি আটকে দেন।
এ সময় সোহরাব আলী ও তাঁর ছোট ভাই ইদ্রিস আলীর সাথে দায়িত্বরত বিজিবি’র সদস্যদের কথা কাটাকাটি হয়। বিজিবিও উত্তেজিত হয়ে মাংস ব্যবসায়ীদেরকে খারাপ ভাষায় গালি- গালাজ করে।
একপর্যায়ে ওই দুই ভাইকে চর, থাপ্পর, লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দেয় বিজিবির সদস্যরা। স্থানীয়রা আহতাবস্থায় সোহরাব আলীকে উদ্ধার করে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। অপর আহত ভাই ইদ্রিস আলীকে বিজিবি সদস্যরা দহগ্রাম ক্যাম্পে নিয়ে প্রায় ৫ ঘন্টা আটকে রাখেন। দুপুর পৌনে ৩ টায় দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন প্রধান ও কুচলিবাড়ি ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফজলুল হক তারা পানবাড়ি কম্পানি কমান্ডার এবং ৬১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সিও’র সাথে কথা বলে মুচলেকা দিয়ে ইদ্রিসকে ছাড়িয়ে আনেন।
সোহরাব আলী (৪৫) বলেন, ‘বিজিবি অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে বলে টাকা এখনও পাইনি। আমি ও ছোট ভাই প্রতিবাদ করলে পিছন থেকে ৩- ৪ জন বিজিবি আমাকে এবং ছোট ভাইকে ধরে লাথি ও মারধর এতে আমার অন্ডকোষে আঘাত লাগে। আমি মাটিতে পড়ে যাই।’
ইদ্রিস আলী (৪০) বলেন, ‘আমাকে ক্যাম্পে নিয়ে কাপড় দিয়ে চোখ বেঁধে দেয়, হাতকড়া পড়িয়ে আবারও মারপিট করে।’
চেকপোস্টে দায়িত্বরত বিজিবি সদস্য ওয়াহেদুজ্জামান বলেন, ‘আমি রাগ করে তাঁদেরকে (সোহরাব- ইদ্রিস আলীকে) গাড়ি নিয়ে পিছনে যেতে বলেছি। এজন্য তাঁরা ভাষা খারাপ করে। ক্যামেরার সিসি ফুটেজের উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁকে মারপিট করার কোনো যুক্তি আসে না।’
দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন প্রধান ঘটনা স্বীকার করে বলেন, আমরা বিজিবির সাথে কথা বলে ইদ্রিস আলীকে ছাড়িয়ে নিয়েছি। সোহরাব আলী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। ’
বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ৬১ ব্যাটালিয়নের পানবাড়ি কম্পানি কমান্ডার জাহাবুল ইসলাম বলেন, ‘টাকা নেয়ার কথা সত্য নয়। কেউ আমাদের নামে টাকা নিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওখানে মারপিটের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তারা ভাষা খারাপ করেছে এজন্য বেঁধে রাখা হয়েছিলো। ঘটনা নিয়ন্ত্রণের জন্য একজনকে আটক করা হয়েছিল।
দহগ্রাম ইউপি চেয়াম্যান চেয়ারম্যান কামাল হোসেন প্রধান ও কুচলিবাড়ি ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফজলুল হকের অনুরোধে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান বিজিবি’র ওই কর্মকর্তা।
জেএম/রাতদিন