তিন দিনে হাফ সেঞ্চুরিতে মুশফিক

বিধ্বস্ত, পরিকল্পনাহীন আর দিশেহারা বাংলাদেশের দেখা মিলল ইডেন গার্ডেন্সে। হারটা যেন মাঠে নামার আগেই মেনে নিয়েছিল দল। তারপর যা হওয়ার তাই হলো। তবে শনিবার দিনের খেলা শেষ হতেই যেন গ্যালারিতেও স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে। যাক, দুই দিনে অন্তত হারতে হলো না!

কলকাতায় সূর্য ডোবার পর বিরাট কোহলির সিদ্ধান্ত বিপাকে ফেলে দেয় টাইগারদের। ১ম ইনিংসে সংগ্রহ ৯ উইকেটে ৩৪৭। ইডেনের মিডিয়া বক্সে পাশেই বসা ভারতের এক সাংবাদিক হাসি মুখে বলে উঠলেন. ‘ম্যাচ আজই শেষ হয়ে যাবে।’

আরেকজন উৎসাহ নিয়ে স্কোরারের কাছে জানতে চাইলেন দিনের ওভার কতো বাকি! ৪৪ ওভার! ব্যস তাদের মুখে যেন স্বস্তির হাসি। তিন দিন নয়, দু’দিনেই টেস্ট শেষের সুবাস যেন পাচ্ছিল স্বাগতিকদের গণমাধ্যম।

যদিও এটা নিশ্চিত গোলাপি বলে দিবা-রাত্রির টেস্টে অভিষেকটা মনে রাখার মতোই হতে যাচ্ছে ভারতের। আর উল্টোটা বাংলাদেশের। ইনিংস হার বাঁচাতে এখনো চাই ৮৯ রান। হাতে উইকেট ৪টি।

ইডেনে অনেক আলোচিত এই লড়াইয়ে শুধু টসটাই জিতেছে বাংলাদেশ। এরপর আর কিছুই করা হয়নি। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে দল দল অলআউট ১০৬ রানে। তারপর ৯ উইকেটে ৩৪৭ রানে ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। তারপর শনিবার ২৪১ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে নেমে আরও ভরাডুবি নখদন্তহীন টাইগারদের। দ্বিতীয় ইনিংসে সংগ্রহ ৬ উইকেটে ১৫২ রান।

অবশ্য এমন ভরাডুবি টেস্টে নতুন কিছু নয়।  আর সব মিলিয়ে শতবর্ষের টেস্ট ইতিহাসে দুদিনে ম্যাচ শেষ হয়েছে ২১ বার। ভাগ্য ভাল এই কলঙ্ক লাগল না টাইগারদের গায়ে।

অথচ যোগ্যতার পরিধি দেখানোর দারুণ মঞ্চ পেয়েছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। কিন্তু ইডেন যেন হয়ে উঠল সাম্প্রতিক সময়ের টাইগার ক্রিকেটের আয়না। যেখানে দেশের লঙ্গার ভার্সন ক্রিকেটের কংকালটাও বেরিয়ে এসেছে। হয়তো এটাই বাস্তবতা।

টেস্টের দ্বিতীয় দিনে শনিবার প্রথম অংশটা ছিল বিরাট কোহলির। ইডেনে আরেকটি শতরান তুলে নিয়েছেন ভারত অধিনায়ক। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই মাঠে খেলা নিজের শেষ ম্যাচটাতেও দু’হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়েছিলেন ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান।

স্পিনার তাইজুল ইসলামের বলে স্কোয়ার লেগে পাঠিয়ে দুই রান নিয়ে টেস্টে নিজের ২৭তম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। তিন অঙ্কে পৌঁছতে খেলেন ১৫৯ বল। অধিনায়ক হিসেবে এটি বিরাটের ২০তম সেঞ্চুরি।

আর এটা তো মনে রাখতেই হবে গোলাপি বলে ভারতের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান বিরাট! শতরান করে অবশ্য বেশিক্ষণ টিকে থাকেন নি তিনি। এবাদত হোসেনের বলে ডিপ স্কোয়ার লেগে তাইজুল ইসলামের অবিশ্বাস্য ক্যাচে আউট অধিনায়ক। তার আগে করলেন ১৯৪ বলে ১৩৬।

তখনই জুটি বাধলেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের ব্যাটে কিছুটা প্রতিরোধ অন্তত গড়ে তুলে বাংলাদেশ। জুটি যখন জমে উঠল তখনই সর্বনাশ। খুড়িয়ে খুড়িয়ে মাঠ ছাড়েন মাহমুদউল্লাহ। হ্যামস্ট্রিংয়ে চোটে কাবু রিয়াদ। অবসর নিয়ে মাঠে ফেরার আগে তার ব্যাটে ৪১ বলে ৩৯।

এরপর মুশফিকের সঙ্গে যোগ দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। শুরুতে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বল স্লিপে ক্যাচ দিয়েছিলেন। কিন্তু অজিঙ্কা রাহানে মিস করলে ৪ রানের সময় প্রাণে বাঁচেন মিরাজ। শেষ অব্দি তার তিনি ফিরেন ১৫ রানে। তবে মুশফিক ছিলেন অবিচল। দিন শেষে ৫৯ রানে অপরাজিত সাবেক এই অধিনায়ক।

ম্যাচটা তৃতীয় দিনে গেলেও সবচেয়ে দুঃখ হচ্ছে ইডেনের দর্শকদের জন্য। যারা গোলাপি বলের টেস্ট দেখার জন্য অধীর হয়ে ছিলেন। প্রথম দিনই শুক্রবার উত্তাল হয়ে উঠেছিল গ্যালারি। শনিবারও একই দৃশ্যপট।

মাঠ ভর্তি দর্শক। টি-টোয়েন্টির এই যুগে টেস্ট ম্যাচকে ঘিরে এমন রোমাঞ্চে জল ঢেলে দিলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।

রোববার ছুটির দিনে চটজলদিই হয়তো গোলাপি টেস্ট জয়ের আনন্দে মাতবে ভারত!

সংক্ষিপ্ত স্কোর-

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৩০.৩ ওভারে ১০৬

ভারত ১ম ইনিংস: ৮৯.৪ ওভারে ৩৪৭/৯ (ডি.) (আগের দিন ১৭৪/৩) (মায়াঙ্ক ১৪, রোহিত ২১, পুজারা ৫৫, কোহলি ১৩৬, রাহানে ৫১, জদেজা ১২, ঋদ্ধিমান ১৭*, অশ্বিন ৯, উমেশ ০, ইশান্ত ০, শামি ১০*; আল আমিন ৩/৮৫, আবু জায়েদ ২/৭৭, ইবাদত ৩/৯১, তাইজুল ১/৮০)

এনএ/রাতদিন