পাটগ্রামে ঋণ দেয়ার নামে টাকা নেয়ার অভিযোগ যুব উন্নয়ন সুপারভাইজারের বিরুদ্ধে

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় যুব উন্নয়ন কার্যালয়ের ক্রেডিট সুপারভাইজার আজিজুল ইসলাম রাজুর বিরুদ্ধে ঋণ দেয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত বছর প্রশিক্ষণ পাওয়া স্থানীয় বেকার যুব নারী ও পুরুষের কাছ থেকে এই টাকা নেন বলে অভিযোগে জানা গেছে।

ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে এসব তথ্য জানা যায়।

পাটগ্রাম উপজেলা কার্যালয়ের বিশ্বস্ত একটি সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ দিন যাবত উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার পদটি শূন্য রয়েছে। ফলে ওই পদে দীর্ঘ ছয় বছর ধরে অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন লালমনিরহাট জেলার যুব উন্নয়ন কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুস সালাম শিকদার।

তিনি নিয়মিত অফিস না করায় কার্যালয়ের ক্রেডিট সুপারভাইজারদের অনিয়ম বেড়ে চলেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ভুক্তভোগীদের দায়ের করা অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, পাটগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের বেকার যুব নারী-পুরুষদের আত্মকর্মসংস্থান ও স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষে পাটগ্রাম যুব উন্নয়ন কার্যালয় থেকে গতবছর অক্টোবর মাসে ২৮ জনকে গাভি পালনের জন্য পনেরো দিনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

প্রশিক্ষণ শেষে ঋণ দেয়ার নাম করে পাটগ্রাম যুব উন্নয়ন কার্যালয়ের ক্রেডিট সুপারভাইজার মো. আজিজুল ইসলাম রাজু প্রত্যেকের কাছে জমির মূল দলিল, খতিয়ান, সার্টিফিকেট ও তিন হাজার করে টাকা নেন। এরপর বছর পেরিয়ে গেলেও ঋণ পায়নি ভুক্তভোগীরা। ঋণ না পেয়ে জমির মূল দলিলসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও টাকা ফেরত চান ভুক্তভোগীরা। কিন্ত তারা টাকা কিংবা কাগজপত্র কোনটিও ফেরত দেয়নি।

অভিযোগ রয়েছে, পাটগ্রাম উপজেলা যুব উন্নয়নের ক্রেডিট সুপারভাইজার আজিজুর রহমান রাজুর সাথে আরেক ক্রেডিট সুপারভাইজার মোতালেব হোসেনও এই প্রক্রিয়ায় জড়িত রয়েছে।

পাটগ্রাম যুব উন্নয়ন কার্যালয়ের এই ক্রেডিট সুপারভাইজার মোতালেব হোসেনও অনেকের কাছে ঋণ দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছে। তিনিও কাউকে টাকা ফেরত দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

এ বিষয়ে পাটগ্রাম ইউনিয়নের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন জানান, ‘ঋণ দেয়ার কথা বলে ৬ হাজার টাকা নিয়েছে মোতালেব। এখন তিনি ধরা দিচ্ছেন না।’ তবে মোতালেব হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পেরজন্য ৫ শ’ টাকা করে জমা নেওয়া হয়েছে। আর ঋণের প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে।’

ভুক্তভোগী মনিরুজ্জামান জনি (২২), এরশদাদুল হক ২৫), সুমি আক্তার (২৮) ও হাসিনা বেগম (৩০) জানান, ঋণ দেয়ার কথা বলে আমাদের কাছ থেকে তিন হাজার করে টাকা ও জমির মূল দলিল নিয়েছে যুব উন্নয়নের ক্রেডিট সুপারভাইজার আজিজুল ইসলাম রাজু। কিন্তু দীর্ঘ দিন হয়ে গেলও ঋণ  দিচ্ছে না, টাকা ও জমির মূল দলিলও ফেরত দিচ্ছে না।

আজিজুল ইসলাম রাজু অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘কিসের জন্য তাদের কাছ থেকে তিন হাজার টাকা নেব। নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের জন্য ৫ শ’ টাকা করে জমা নেয়া হয়েছে।’

পাটগ্রাম উপজেলা যুব উন্নয়ন কার্যালয়ের দায়িত্বে থাকা কর্মককর্তা আব্দুস সালাম শিকদার বলেন, ‘আমি সোমবার পাটগ্রামে ও বুধবার হাতিবান্ধায় অফিস করি। ২০১৫ সাল থেকে দায়িত্বে আছি। প্রায় পাঁচ-ছয় বছর থেকে এখানে কর্মকর্তা নাই। অভিযোগের বিষয়টি আমার নলেজে নাই।’

তবে তিনি দাবী করেন, ‘আমাদের যে সমস্ত ট্রেনিং হয় তাতে আমি বলে দেই, কেউ যেন কাউকে টাকা না দেয়।’

এবিষয়ে পাটগ্রাম উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার দেব শর্মা বলেন, ‘ওরা আমার কাছে এসেছিলো অনেক দিন আগে । উপজেলা  যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আসেনা, থাকেওনা, তাকে দেখাও যায় না। এজন্য আমি অভিযোগকারীদের জেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা অথবা ডিসি স্যারকে অভিযোগ দিতে বলেছি।

তবে বিষয়টি অবিলম্বে সুরাহা হওয়া দরকার বলে জানান তিনি

এনএইচ/রাতদিন