প্রাথমিকের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে দুর্নীতির অভিযোগ 

রাতদিন ডেস্ক পাটগ্রাম:

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় প্রাথমিকের শিক্ষকদের শিক্ষাক্রম বিস্তরণ প্রশিক্ষণে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া শিক্ষক/প্রশিক্ষণার্থীদেরকে নি¤œমাণের খাওয়া ও উপকরণ দেওয়া এবং সম্মানী হতে টাকা কেটে নেওয়া হয়।

 

প্রাইমারী টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই) জেলা সুপারিনটেনডেন্ট মোছাম্মৎ শামছিয়া আখতার বেগম বলেন, ‘আমি খোঁজ নিয়ে দেখব, মানসম্মত জিনিস দিয়েছি কি না। দুর্নীতি কারোরই করার সুযোগ নেই।

 

সরকার মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রম বিস্তরণ প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেয়। আরডিপিপি উন্নয়ন প্রকল্প কর্মসূচী পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে বাস্তবায়ন করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। অভিযোগ উঠেছে এ প্রশিক্ষণে শিক্ষকদেরকে নিমানের খাবার ও উপকরণ সামগ্রী দেওয়া এবং প্রদেয় ভাতা হতে কেরানীর মাধ্যমে টাকা কেটে নিয়েছেন উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের কর্মকর্তা।

 

জানা গেছে, এ উপজেলায় আরডিপিপি অনুযায়ী অর্থবছরে শিক্ষকগণের জন্য শিক্ষাক্রম বিস্তরণ প্রশিক্ষণের বাজেট দেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের (ইউআরসি) মাধ্যমে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ণ করা হচ্ছে।

 

পাটগ্রাম উপজেলায় ১৪৬ টি প্রাথমিক সরকারি বিদ্যালয় রয়েছে। প্রতিটি বিদ্যালয় হতে ১ জন করে মোট ৩০ জন শিক্ষক নিয়ে একটি করে ব্যাচ গঠন করা হয়। প্রতিটি ব্যাচকে ৩ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। অর্থবছরে ২৩ টি শিক্ষকদের ব্যাচ/দলকে উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের মাধ্যমে ৬৯০ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

 

এভাবে প্রশিক্ষণে জনপ্রতি কোর্স কো-অর্ডিনেটরের সম্মানী একদিন ১ হাজার দুই শত ও সহায়ক কর্মকর্তা ৮ শ টাকা, তিনদিনে প্রশিক্ষক ৩ হাজার, শিক্ষক একহাজার ৫ শ টাকা, সহায়ক কর্মচারী ৯ শ টাকা ও সবার তিনদিনের খাবার ভাতা ৮৪০ টাকা, প্রশিক্ষণার্থীদেরকে ৫ শ টাকা মূল্যের একটি ব্যাগ, প্রত্যেককে ৫ শ টাকার প্রশিক্ষণ উপকরণ, যাতায়াত ভাতা, ব্যানার ও প্রশাসনিক ব্যয়সহ প্রতিটি ব্যাচে ১ লাখ ৯২ হাজার ৫৪০ টাকা করে বরাদ্দ দেয় সরকার। প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া শিক্ষকদের অভিযোগ ইউআরসি কর্মকর্তা এ এস এম হেলাল তাঁর কার্যালয়ের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর রেজাউল হাকামের যোগসাজসে শিক্ষকদের কম টাকায় নি¤œমানের ব্যাগ, উপকরণ ও খাবার সরবরাহ করে। এছাড়াও সনদ প্রদানের সময় টাকা নেওয়া এবং যাতায়াত ভাতা গায়েব করা হয়। এ নিয়ে ইউআরসি কর্মকর্তার সাথে শিক্ষক প্রতিনিধিদের বিতন্ডা হয়। হিসবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়েও যায় শিক্ষকেরা। পরবর্তীতে ইউআরসি কর্মকর্তা ও ডাটা এন্ট্রি অপারেটর বিষয়টি ম্যানেজ করেন।

 

উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ‘যে কক্ষটিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় সেখানকার পরিবেশও ভালো না। সরকার হিউজ বাজেট দেয়। ইউআরসি কর্মকর্তা ও ডাটা এন্ট্রি অপারেটর কাটছাট করে টাকা মেরে দেয়। ব্যাগের ও উপকরণের কোয়ালিটি খুবই খারাপ।’

 

এ ব্যাপারে একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে দুর্নীতি করে কয়েক লক্ষ টাকা লুটপাট করেছে ইউআরসি কর্মকর্তা ও ডাটা এন্ট্রি অপারেটর।’

 

ইউআরসি কর্মকর্তা এ এস এম হেলাল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এ ধরণের অভিযোগ তো কেউ দেয়নি আমাদের। খাবার, উপকরণ সবই ঠিক ছিল। হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কাছে শিক্ষকরা গিয়েছিল, শুনেছে তাঁরা বিধিমোতাবেক (শিক্ষকরা) পাবে না।’

 

এ ব্যাপারে প্রাইমারী টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই) জেলা সুপারিনটেনডেন্ট মোছাম্মৎ শামছিয়া আখতার বেগম বলেন, ‘আমি খোঁজ নিয়ে দেখব, মানসম্মত জিনিস দিয়েছি কি না। দুর্নীতি কারোরই করার সুযোগ নেই। যদি অভিযোগ সত্য হয়, তারপর অফিসিয়াল ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’