সাবেক ছিটমহল বাসিন্দাদের মূল ধারায় নিয়ে আসতে সরকারের বহুমুখী সহায়তা ও নানা পদক্ষেপের কারণে বিগত চার বছরে এসব এলাকার হাজারো মানুষের জীবনযাত্রার ব্যাপক উন্নয়নে ঘটেছে। সাম্প্রতিক বিভিন্ন সমীক্ষা ও গবেষণায় এমন চিত্রই ফুটে উঠেছে।
সাবেক ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ এনক্লেভ এক্সচেঞ্জিং কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম মোস্তফা বাসসকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, ‘মাত্র চার বছরে আকাঙ্খার চেয়ে অনেক বেশি পেয়ে সাবেক ছিটমহলবাসীরা খুশী। তিনি আরো বলেন, ‘সাবেক ছিটমহলবাসীদের মূলধারায় নিয়ে আসতে সরকার ২শ’ কোটি টাকা ব্যয় করে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করায় ৩৭ হাজার মানুষের জীবনমানের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে।’
মোস্তফা বলেন, ‘মূল ভূখন্ডে বসবাসকারী মানুষের এ ধরনের উন্নয়নের জন্য চার দশক সময় লাগে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় আমরা মাত্র চার বছরে একই উচ্চতায় পৌঁছেছি।’
রংপুর বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (জেনারেল) মো. জাকির হোসেন বলেন, ১৯৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি অনুযায়ী ঐতিহাসিক ল্যান্ড বাউন্ডারি এগ্রিমেন্ট (এলবিএ) বাস্তবায়নের পর সরকার এরই মধ্যে সাবেক ছিটমহলগুলোর ব্যাপক উন্নয়ন ঘটিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালের ১ আগস্ট বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ১৬২টি ছিটমহল বিনিময়ের পরপরই সরকার ২শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ করে। ওই সময় থেকেই সরকারের বিভিন্ন বিভাগ, এনজি ও অন্যান্য সংগঠন সেখানে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ শুরু করে।’
কুড়িগ্রামে ১২টি, লালমনিরহাটে ৫৯টি, নীলফামারীতে ৪টি ও পঞ্চগড়ে ৩৬টিসহ সবগুলো সাবেক ছিটমহলের প্রতিটি পরিবার মূল ভূখন্ডের বাসিন্দাদের মতোই বিদ্যুৎ, স্যানিটেশন, সুপেয় পানি ও অন্যান্য নাগরিক সুবিধা পাচ্ছে।
জাকির হোসেন আরো বলেন, ‘বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি এই সব সাবেক ছিটমহলের বেকার যুবক-যুবতীদের উপার্জনশীল করে তুলতে প্রশিক্ষণ, ঋণ সহায়তা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান এবং বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা দেয়া হয়েছে । ছাত্রীদের আধা-বেতন মওকুফ করা হয়েছে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মুহাম্মদ আলি বলেন, সাবেক ছিটমহলগুলোর কৃষি আধুনিকায়ন করতে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে।
সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার অব বাংলাদেশ রুরাল ইলেট্রিফিকেশন বোর্ড (আরইবি) এর রংপুর জোনাল অফিসের প্রকৌশলী মানবেন্দ্র লাল মুস্তাফি বলেন, আরইবি সাবেক ছিটমহলগুলোর প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ সুবিধা পেয়ে অনেকে বিদ্যুৎ ভিত্তিক ছোট কুটির শিল্প, কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। এর মাধ্যমে সাবেক ছিটমহলগুলোর বেকার নারী ও পুরুষের কর্মসংস্থানের পথ সুগম হয়েছে এবং তাদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেছে।’
কুড়িগ্রামে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাবেক ছিটমহল দশিয়ারছাড়ার বাসিন্দা আব্দুল খালেক বলেন, ‘সুদীর্ঘ ৬৮ বছর রাষ্ট্রহীন ও নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকার পর ২০১৫ সালের ১ আগস্ট থেকে সাবেক ছিটমহলবাসীরা নবজীবন ফিরে পেয়েছে।
তিনি বলেন, ‘নাগরিকত্ব, মানবাধিকার, স্মার্ট কার্ড, ভোটাধিকার, রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট ব্যবহার করতে পারা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির অন্তর্ভূক্ত হওয়াসহ মাত্র এই চার বছরে আমরা যা পেয়েছি তা ভাবতেই অবাক লাগছে।’
দাশিয়ারছাড়া জুনিয়র গার্লস হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী মৌসুমী ও দশম শ্রেণীর ছাত্রী রাবেয়া জানায়, তারা নিজেদের স্কুলে যেতে পেরে এখন খুব খুশী। দাশিয়ারছাড়ার গৃহবধূ আকলিমা বলেন, নিজেদের দেশে থাকতে পেরে তিনি নিজেকে সম্পূর্ণ মানুষ মনে করছেন।
সাবেক ছিটমহলগুলোর দ্রুত উন্নয়নের জন্য তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
পঞ্চগড়ের সাবেক গারাতি ছিটমহলের বাসিন্দা মফিজুর রহমান বলেন, এখানকার ৮ হাজার ৫০৪টি বাড়ির সবগুলোতেই বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। এছাড়াও এখানে ৩২টি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা স্থাপন করা হয়েছে।
সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দারা বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাদের মুক্ত করার জন্য বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ।
এনএইচ/রাতদিন
উত্তরের মুখ