আফগানিস্তানের বিপক্ষে রেকর্ড গড়া ম্যাচে ১৫০ রানের বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছে ইংল্যান্ড। দলের জয়ে ৭১ বলে ১৪৮ রানের ঐতিহাসিক ইনিংস খেলেন অধিনায়ক ইয়ন মরগান। এছাড়া ৯৯ বলে ৯০ রান করেন জনি বেয়ারস্টো। ৮২ বলে ৮৮ রান করেন জো রুট।
মঙ্গলবার, ১৮ জুন বিশ্বকাপের ইতিহাসে ৩৯৭ রানের সর্বোচ্চ ইনিংস খেলে ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপে ইংলিশদের এটা সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। এর আগে চলতি বিশ্বকাপেই বাংলাদেশের বিপক্ষে ৬ উইকেটে ৩৮৬ রান করেছিল ইয়ন মরগানের নেতৃত্বাধীন দল। তবে বিশ্বকাপের ইতিহাসে আফগানিস্তানের বিপক্ষে গত আসরে সর্বোচ্চ ৪১৭/৬ রানের রেকর্ড গড়া ইনিংস খেলেছে অস্ট্রেলিয়া।
মঙ্গলবার ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারে প্রথমে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ৩৯৭ রানের পাহাড় গড়ে ইংল্যান্ড। টার্গেট তাড়া করতে নেমে ৮ উইকেটে ২৪৭ রান তুলতে সক্ষম হয় আফগানিস্তান। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৭৬ রান করেন হাসমতউল্লাহ শহীদি। এছাড়া ৪৬ রান করেন রহমত শাহ। ৪৪ ও ৩৭ রান করেন সাবেক ও বর্তমান অধিনায়ক আসগর আফগান ও গুলবাদিন নাইব।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৯৮ রানের পাহাড় ডিঙাতে নেমে মাত্র ৪ রানে ওপেনার নুর আলী জাদরান আউট হলে দলের হাল ধরেন গুলবাদিন নাইব ও রহমত শাহ।
দ্বিতীয় উইকেটে তারা ৪৮ রানের জুটি গড়েন। ২৮ বলে ৩৭ রান করে ফেরেন আফগানিস্তানের অধিনায়ক গুলবাদিন নাইব। এরপর তৃতীয় উইকেটে হাসমতউল্লাহর সঙ্গে ৫২ রানের জুটি গড়তেই বিপদে পড়ে যান রহমত শাহ। ৭৪ বলে ৪৬ রান করে ফেরেন তিনি।
২৪.৫ ওভারে দলীয় ১০৪ রানে তিন ব্যাটসম্যানের বিদায়ের পর দলের হাল ধরেন হাসমতউল্লাহ ও আসগর আফগান। চতুর্থ উইকেটে তারা ৯৪ রানের জুটি গড়েন। ৪৮ বলে তিনটি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৪ রান করে ফেরেন সাবেক অধিনায়ক আসগর আফগান। মাত্র ৯ রানে আউট হন মোহাম্মদ নবী।
ব্যাটসম্যানদের এই আসা-যাওয়ার মিছিলে ব্যতিক্রম ছিলেন হাসমতউল্লাহ। ইনিংসের শেষ দিকে জফরা আর্চারের গতির বলে বোল্ড হওয়ার আগে ১০০ বলে পাঁচটি চার ও দুটি ছক্কায় ৭৬ রান করে ফেরেন হাসমত। তার বিদায়ের পর ১৩ বলে ১৫ রান করে ফেরেন নজিবুল্লাহ জাদরান। শেষ দিকে রশিদ খান ও ইকরাম আলিখিনরা দলের পরাজয়ের ব্যবধান কিছুটা কমালেও হারা এড়াতে পারেননি।
ইংল্যান্ড ৩৯৭/৬
ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করে ইংল্যান্ড। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে জনি বেয়ারস্টোর সঙ্গে উদ্বোধনীতে নেমে ৯.৩ ওভারে ৪৪ রানের জুটি গড়েন জেমস ভিন্স। দৌলত জাদরানের বলে ক্যাচ তুলে দেয়ার আগে ৩১ বলে ২৬ রান করে ফেরেন জেমস ভিন্স।
ওয়ান ডাউনে ব্যাটিংয়ে নামে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা জো রুট। দ্বিতীয় উইকেটে রুটকে সঙ্গে নিয়ে ১২০ রানের জুটি গড়েন বেয়ারস্টো। এই জুটিতেই অনবদ্য ব্যাটিং করে ৬১ বলে ফিফটি পূর্ণ করে সেঞ্চুরির পথেই ছিলেন তিনি। কিন্তু ৯৯ বলে ৮টি চার ও তিন ছক্কায় ৯০ রান করে গুলবাদিন নাইবের গতির মুখে পড়ে সাজঘরে ফেরেন বেয়ারস্টো। তার বিদায়ে ২৯.৫ ওভারে ১৬৪ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় ইংল্যান্ড।
এরপর তৃতীয় উইকেটে জো রুটের সঙ্গে ১৮৯ রানের জুটি গড়েন ইয়ন মরগান। আর এই জুটিতেই ৫৭ বলে শতরানের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেন তিনি। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এটা চতুর্থ দ্রুততম সেঞ্চুরি।
এর আগে ২০১১ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ৫০ বলে সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছেন আয়ারল্যান্ডের ক্রিকেটার কেভিন ওব্রায়েন। ৫১ বলে সেঞ্চুরি করেছেন অস্ট্রেলিয়ার তারকা ক্রিকেটার গ্ল্যান ম্যাক্সওয়েল। আর ৫২ বলে সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছেন এবি ডি ভিলিয়ার্স।
ইয়ন মরগানের মতো সেঞ্চুরির পথেই ছিলেন জো রুট। গুলবাদিন নাইবের শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ৮২ বলে পাঁচটি চার ও এক ছক্বায় ৮৮ রান করে ফেরেন রুট। এর আগের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি।
জো রুট বিদায় নেয়ার পর পরই আউট হয়ে যান ইয়ন মরগান। গুলবাদিন নাইবের তৃতীয় শিকার পরিণত হওয়ার আগে মাত্র ৭১ বলে ১৭টি ছক্কা ও ৪টি চারের সাহায্যে ১৪৮ রান করেন মরগান। শেষ দিকে মঈন আলীর ৯ বলের অপরাজিত ৩১ রানের ঝড়ো ইনিংসে ৬ উইকেটে ৩৯৭ রানের পাহাড় গড়ে ইংল্যান্ড।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ইংল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩৯৭/৬ (মরগান ১৪৮, বেয়ারস্টো ৯০, জো রুট ৮৮, মঈন আলী ৩১, জেমস ভিন্স ২৫, বাটলার ২, বেন স্টোকস ২, ক্রিস ওকস ১; নাইব ৩/৬৮, দৌলত জাদরান ৩/৮৫)।
আফগানিস্তান: ৫০ ওভারে ২৪৭/৮ (হাসমত ৭৬, রহমত শাহ ৪৬, আসগর ৪৪; জফরা ৩/৫২, আদিল রশিদ ৩/৬৬)।
ফল: ইংল্যান্ড ১৫০ রানে জয়ী।