যেমন খুশি তেমন চলে হাতীবান্ধার উত্তর জাওরানী বুড়িমারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়

ঘড়ির কাটায় তখন সকাল ঠিক ১০টা। বিদ্যালয় মাঠে খেলার ছলে ছুটা ছুটি করছে শিক্ষার্থীরা । এদের মধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থী জানালো প্রধান শিক্ষক ছাড়া অন্য শিক্ষকগন এখনও বিদ্যালয়ে আসেননি। ক্লাস তো দুরে কথা অনুষ্ঠিত হয়নি শিক্ষার্থীদের সমাবেশ।

এমন চিত্র দেখা গেছে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার উত্তর জাওরানী বুড়িমারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১৭কি.মি দুরে বিদ্যালয়টির অবস্থান। শিশু শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত মোট ২১৭জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে বিদ্যালয়টিতে রয়েছেন ৫জন শিক্ষক।

গতকাল রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর সরেজমিনে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল ১০টা পর্যন্ত শুধুমাত্র প্রধান শিক্ষক উপস্থিত হয়েছেন।  যেখানে সরকারী নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৯টায় বিদ্যালয়ে উপস্থিতি, ৯টা ১৫মিনিটে সমাবেশ এবং সাড়ে ৯টায় শিক্ষার্থীদের প্রথম ক্লাস হওয়ার কথা। সেখানে পাঠদান তো দূরের কথা, তখন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের নিয়মিত সমাবেশেই অনুষ্ঠিত হয়নি। তাই শিক্ষার্থীরা নিজ মনে খেলা করছে মাঠে। কিছু সময় পর সহকারী শিক্ষক রেজাউল করিম বিদ্যালয়ে আসেন। তখন ঘড়িতে সময় ১০টা ১৫মিনিট।

এ বিষয়ে তিনি জানান, ব্যক্তিগত কাজে উপজেলা শহরে যাওয়ায় বিদ্যালয়ে আসতে একটু বিলম্ব হয়েছে। বিষয়টি তিনি প্রধান শিক্ষককে অবগত করেছেন। স্থানীয় ভাবে প্রভাবশালী সহকারী শিক্ষক হিসাবে পরিচিত নুরনবী হোসেন যখন বাইকে চেপে বিদ্যালয়ে এলেন তথন সময় সাড়ে ১০টা পেরিয়েছে।

অন্যদিকে, বেলা ১১ পর্যন্ত অপর দুই শিক্ষিকা মধুমিতা রানী ও স্বপ্না রানী বিদ্যালয়ে উপস্থিতই হননি। এমনকি বেলা ১১ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সমাবেশ কিংবা কোন শ্রেণী কক্ষে পাঠদানের দৃশ্য চোখে পড়েনি।

অবিভাবক ও স্থানীয় লোকজন জানান, বিদ্যালয়টিতে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করা হয়না। লেখাপড়াও হয়না তেমন। শিক্ষকরা নিজের খেয়াল খুশি মত বিদ্যালয়ে আসেন যান। ওই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি অনন্ত কুমার রায় প্রধান শিক্ষকের নিকটতম স্বজন হওয়ায় কমিটির অন্যান্য সদস্যরাও এ বিষয়ে কিছুই বলেন না। তাই অভিভাবকবিহীন হয়ে পড়েছে বিদ্যালয়টি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রতাব চন্দ্র রায় বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয় তো এমন একটু হবেই। শধু এখানেই নয়, প্রায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়েই এমনটা হয়’ বলে সাফ জানিয়ে দেন ওই প্রধান শিক্ষক।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সোলায়মান মিয়া বলেন, ‘বিষয়টি তিনি ইতোমধ্যে অবগত হয়েছেন। অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের প্রক্রিয়া চলছে।’

এনএইচ/রাতদিন