রংপুরে করোনায় বিয়ে বন্ধসহ ১৫টি নির্দেশনা পুলিশের

করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ১৫টি নির্দেশনা মানতে মহানগরবাসীকে অনুরোধ জানিয়েছে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরপিএমপি)।

করোনার সংক্রমণ রোধে ১৫ দিন (১ থেকে ১৫ এপ্রিল) মেট্রোপলিটন এলাকায় সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয়সহ সব ধরনের অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে করোনা সংক্রমণের রেকর্ডের মধ্যেই শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে শুরু হয় মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা। নগরের কেন্দ্রগুলোতে ভিড় জমাতে থাকেন পরীক্ষার্থীরা। প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনের স্থান পরিণত হয় জনসমুদ্রে, সেখানে ছিল না স্বাস্থ্যবিধির বালাই।

বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) রাতে আরপিএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (ডিবি ও মিডিয়া) উত্তম প্রসাদ পাঠক স্বাক্ষরিত গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে ঘরের বাইরে এবং জনসম্মুখে মাস্ক না পরলে কিংবা স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৫ দিনের জন্য রংপুর মেট্রোপলিটন এলাকায় বিয়ে-জন্মদিনসহ যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে জনসমাগম বন্ধ থাকবে। মসজিদ-মন্দিরসহ সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রে যেকোনো প্রকার জনসমাগম ও মাস্কবিহীন প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের ১৪ দিন পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।

শুক্রবার সকালে রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের সড়কে মেডিকেল পরীক্ষার্থীদের ভিড়
এই ১৫ দিন সব ধরনের মেলার আয়োজন ও সিনেমা হল বন্ধ থাকবে। পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রে জনসমাগম নিষিদ্ধ থাকবে। গণপরিবহনে মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। ধারণক্ষমতার ৫০ ভাগের অধিক যাত্রী গণপরিবহনে তোলা যাবে না। স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান, শপিং মলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কে মাস্ক পরতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য; খোলা ও উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে কেনাবেচা এবং ওষুধের দোকান, ফার্মেসিতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে।

হোটেল-রেস্তোরাঁয় ধারণক্ষমতার ৫০ ভাগের অধিক মানুষ একসঙ্গে প্রবেশ করতে পারবে না। এসব স্থানে অবশ্যই মাস্ক পরিধান ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। যেকোনো ধরনের গণপরীক্ষার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি পালন করতে হবে।

অপ্রয়োজনীয় ঘোরাফেরা ও আড্ডা বন্ধ করতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাত ১০টার পর বাইরে বের হওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ঘরের বাইরে গেলে মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ এবং অবস্থানকালীন স্বাস্থ্যবিধি পালন করতে হবে।

এর আগে রংপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৫ দিনের জন্য আটটি নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এতে ঘরের বাইরে এবং জনসম্মুখে মাস্ক পরিধান না করলে কিংবা স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়।

স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে বেপরোয়া চলাফেরা; সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে জনসমাগম বাড়তে থাকায় করোনা সংক্রমণ দিন দিন ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন রংপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. হিরম্ব কুমার রায়।

তিনি বলেন, রংপুর মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে বৃহস্পতিবার ১৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রংপুর জেলার ১০ জন, গাইবান্ধার পাঁচজন, লালমনিরহাট ও নীলফামারীর একজন করে। রংপুর জেলায় বর্তমানে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা চার হাজার ১৮৬ জন। এর মধ্যে ৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বুধবার (৩১ মার্চ) স্বাস্থ্য অধিদফতর দেশের ৩১ জেলাকে করোনাভাইরাস সংক্রমণে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে রংপুর ও নীলফামারী জেলা রয়েছে।

এনএ/রাতদিন

মতামত দিন