লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল থেকে কোটি টাকার ওষুধ ‘গায়েব’

লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল থেকে প্রায় কোটি টাকার ওষুধ গায়েব হয়েছে। হাসপাতালের স্টোরের হিসাবে ৩৪ ধরণের ওষুধের হিসাবে গরমিল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে হাসপাতালের স্টোরে একটি কোম্পানির শুধু অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট (জেমিফ্লোক্সাসিন) নেই ৫০ হাজার পিচ। যার দাম ৩২ লাখ টাকা। সবমিলিয়ে অন্তত ৯৫ লাখ টাকার ওষুধ ‘গায়েব’ হয়ে গেছে বলে হাসপাতাল সূত্রগুলো জানিয়েছে।

এ ঘটনায় গঠিত একটি তদন্ত কমিটির প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে ওষুধের হিসাবের এ গরমিল। এদিকে হাসপাতালের স্টোরকিপার মো. সাহেদুল হককে ২৩ মে স্ট্যান্ড রিলিজ (তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার) করে  নীলফামারীর ডিমলায় বদলি করা হয়েছে। তবে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।

সূত্র মতে, লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক গোলাম মোহাম্মদ দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ওষুধ সরবরাহের দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়া শুরু করেন। এ সময় তিনি স্টোরের ওষুধের মজুত ও সরবরাহসংক্রান্ত রেজিস্ট্রারসমূহ পরীক্ষা করেন। এতে স্টোরের ওষুধের স্টক রেজিস্ট্রার, ইস্যু ভাউচার, সরবরাহ বইসহ অন্য কাগজপত্রে ওভার রাইটিং ও কাটাকাটি দেখতে পান।

এ ধরনের অসংগতির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি গত ৩০ এপ্রিল লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন) মো. আবদুল বাসেতকে প্রধান করে তিন সদস্যের স্পেশাল সার্ভে কমিটি করে দেন। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) আমিনুর রহমান ও সদস্য সিনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি) আবদুল হামিদ।

এই কমিটির সদস্যরা ২২ মে হাসপাতালের স্টোরের ৩৪ ধরনের ওষুধের হিসাবের গরমিল রয়েছে মর্মে লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

পরে বিষয়টি রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক অমূল্য চন্দ্র সাহাকে জানালে তিনি স্টোরকিপার মো. সাহেদুল হককে নীলফামারীর ডিমলা ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ দেন।

স্পেশাল সার্ভে কমিটির প্রধান ও লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট মো. আবদুল বাসেত বলেন, ‘তদন্তে ৩৪ ধরনের ওষুধের গরমিল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে জেমিফ্লোক্সাসিন, সেফুরাক্সিম, মন্টিলুকাস্ট ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন ধরণের ওষুধের স্টক ও সরবরাহের সঙ্গে কোনো মিল নেই ‘

গরমিল হওয়া ওষুধগুলো ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সরবরাহ করা হয়েছিল জানিয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক গোলাম মোহাম্মদ বলেন, ‘এ সময় আমি এখানে এই পদে কর্মরত ছিলাম না।’

তিনি জানান, প্রতিটি ৬৪ টাকা মূল্যের জেমিফ্লোক্সাসিন ট্যাবলেট থাকার কথা ছিল ৫৫ হাজার। পাওয়া গেছে মাত্র ৫ হাজার। শুধু এই একটি ওষুধের দাম বর্তমান বাজারদর হিসাবে ৩২ লাখ টাকা।

অধিকতর তদন্ত হলে মোট কী পরিমাণ অর্থের ওষুধের হিসাবে গরমিল  হয়েছে এবং এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িতদের নাম জানা যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এবি/রাতদিন