প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইন্টারনেটে ক্ষতিকর ডিজিটাল কনটেন্ট ফিল্টারিং করার ওপর গুরুত্বারোপ করে সত্য-মিথ্যা যাচাই ছাড়া ইন্টারনেট এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনকিছু শেয়ার বা পোষ্ট না করার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার বৃদ্ধি আমাদের সুযোগ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নানা সমস্যারও সৃষ্টি করছে। দেখা যায় মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট বা অ্যাপস ব্যবহার করতে গেলে বিভিন্ন ধরনের অনেক অপ্রয়োজনীয় লিঙ্ক চলে আসে। তাই, ক্ষতিকর ডিজিটাল কনটেন্ট যধাযথভাবে ফিল্টার করার ব্যবস্থা করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার,৮ জানুয়ারি সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ৩য় ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস ২০১৯’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের মানুষকে আমি বলবো একটা কিছু আসলো (ইন্টারনেটে আপলোড হলো) অমনি সেটা শুনে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা বা অন্য কিছু করা ঠিক নয়। সঠিক তথ্য যাচাই করে নেওয়া দরকার।’
তিনি বলেন, ‘যাচাই না করে শুধুমাত্র গুজবে কান দেয়া বা শুধুমাত্র নিজের কৌতুহলবশত সেগুলোতে প্রবেশ না করাই ভাল। কোন ধরনের মন্তব্য দেওয়া বা ছড়ানো বা সেটাতে হাত দেওয়াই উচিত নয়। ’
তিনি বলেন, ‘কোন পোষ্ট শেয়ার করতে গেলে আগে তার খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে এটা কতটুকু সত্য বা মিথ্যা।’
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তথ্য প্রযুক্তি খাতে বিশেষ অবদানের জন্য ১৪ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মাঝে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ-২০১৯’ সম্মাননা প্রদান করেন।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং আইসিটি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান একেএম রহমতউল্লাহ এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব এএনএম জিয়াউল আলম অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
সরকারের আইসিটি সেক্টরের অগ্রগতি তুলে ধরে একটি ভিডিও চিত্রসহ গত ১২ ডিসেম্বর সারাদেশে ডিজিটাল বাংলাদেশ উদযাপনের তথ্যচিত্রও অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয়।
মন্ত্রি পরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিদেশি কূটনীতিক এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ সহ উদ্যোক্তা, আইএসপি এবং টেলিকমিউনিকেশন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং আমন্ত্রিত অতিথিগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
আইসিটি-ভিত্তিক সেবা সম্পর্কে জনগণকে শিক্ষিত করা এবং প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত দেশ গড়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে গত ১২ ডিসেম্বর সারাদেশে ৩য় ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস উদযাপিত হয়। যার এবারের প্রতিপাদ্য ছিল-‘সত্য মিথ্যা যাচাই আগে, ইন্টারনেটে শেয়ার পরে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ছোট শিশু থেকে শুরু করে তরুণ সমাজকে সাইবার ক্রাইম বা সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন করা একান্তভাবে দরকার।’
সারাদেশে তথ্য প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার দেশের গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দিতে সারাদেশে ৫ হাজার ৮শ’ ৬৫টি ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করেছে। শুধুমাত্র ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে ১০ বছরে মানুষকে ৪৬ কোটি সেবা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশে এখন মোবাইল ফোন গ্রাহক ১৬ কোটি ৪১ লক্ষ ৭০ হাজার। বিএনপি সরকারের এক মন্ত্রীর মনোপলি ব্যবসা ভেঙ্গে তাঁর সরকার মোবাইল ফোনকে বেসরকারী খাতে উন্মুক্ত করে দেওয়াতেই এটা সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ সফলভাবে উৎক্ষেপণ করায় স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সম্প্রচারভিত্তিক সেবা সম্প্রসারণ সহজ হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৩ হাজার ৬শ’টি ইউনিয়ন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কানেক্টিভিটির আওতায় এনেছি, এ বছর আরও ২০০ ইউনিয়নে কানেক্টিভিটি দেওয়া হবে। ২০২১ সালের মধ্যে দুর্গম এলাকার বাকি ৭৭২টি ইউনিয়নে ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছে দিব। দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৯ কোটি ৯৫ লক্ষ ৬৫ হাজারের বেশি।
সরকার প্রধান বলেন, ই-টেন্ডার ও ই-গভর্নেন্স বাস্তবায়নে সফলতা অর্জন করেছি। এক জায়গায় সকল সমস্যার সমাধান-এই লক্ষ্য নিয়ে ‘একসেবা’, ‘এক-পে’ ও ‘একশপ’ উদ্বোধন করা হয়েছে। একইসঙ্গে জনগণ ‘৯৯৯’, ‘৩৩৩’ এবং ‘১০৯’ নম্বরে কল করে বিভিন্ন জরুরি সেবা পাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষার্থী ও তরুণদের উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশে স্টার্টআপ সংস্কৃৃতি গড়ে তোলার উপর জোর দিয়েছি।’ ‘তথ্য-প্রযুক্তিতে দক্ষ মানবসম্পদের চাহিদা মেটাতে জেলা পর্যায়ে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে,’ বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে নির্মিত ৩টি হাইটেক ও সফটওয়্যার পার্কে ১০৮টি প্রতিষ্ঠানকে স্পেস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তারা এ পর্যন্ত ২৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব করেছে। এখন পর্যন্ত বেসরকারি বিনিয়োগ হয়েছে ৩৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এছাড়া সরকার বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কে ডিজিটাইজড তথ্যসেবা ও ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা সংরক্ষণের জন্য ফোর টায়ার ডাটা সেন্টার চালু করেছে।
তিনি সে সময় নেদারল্যান্ডের একটি কোম্পানীর কাছ থেকে অর্ধেক মূল্য পরিশোধ করে বাকীটা অনুদানে দেশের জন্য ১০ হাজার কম্পিউটার সংগ্রহের প্রকল্প চুড়ান্ত হওয়ার পরেই সরকারের দায়িত্বে আসতে না পারায় এবং বিএনপি সে প্রকল্প বাতিল করে দেয়ার ফলে দেশের লোকসান ঘটানোর ঘটনা স্মরণ করে এর কঠোর সমালোচনা করেন।
২০২০ সালে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের উদ্যোগ সহ আগামী প্রজন্মের জন্য শতবর্ষ মেয়াদী ‘ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০’ গ্রহণের প্রসংগ টেনে আইসিটির সম্প্রসারণ এবং আধুনিকায়নে তাঁর সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখারও প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
এসকে/রাতদিন