সেই ৫১ জনের প্রাণহানি: নেপালের তদন্তে পাইলট দায়ী

গেল বছর ১২ মার্চ নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় দু‘জন পাইলটসহ ৫১ জন নিহত হয়। ওই দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে বাংলাদেশি পাইলটকে দায়ী করেছে নেপালের তদন্ত প্রতিবেদনে।

৪৩ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনার সময় বিমানটি যিনি চালিয়েছেন, তিনি মানসিক চাপের মধ্যেই বিমানটি চালাচ্ছিলেন। এমনকি তিনি নিরাপত্তা গাইডলাইন লঙ্ঘন করে ককপিটে বসে সিগারেট খাচ্ছিলেন। পাশাপাশি বিমান চালনোর সময় তিনি অনেক বেশি কথা বলছিলেন বলেও ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

নেপালের কর্তৃপক্ষ ২০১৮ সালের দুর্ঘটনার পর এর কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করে । গত রবিবার দেশটির পর্যটন ও বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে ওই তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেন।

সেদিনের দুঘর্টনায় বিমানটির পাইলটের দায়িত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান আর কো-পাইলট ছিলেন প্রিথুলা রশিদ। দুর্ঘটনায় যাত্রী, ক্রু এবং তারা দু‘জনসহ মোট ৫১ জন নিহত হয়। এতে আহত হন ২০ জন। যাদের অনেকেই গুরতর আঘাত নিয়ে বেঁচে যান।

এই দুর্ঘটনায় নেপালের তদন্তে বলা হয়, ‘বিমানটি অবতরণের সময় যথাযথ প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করা হয়নি। রানওয়ে দেখার পরও পাইলট বেপরোয়াা মনোভাব থেকে খুব কাছাকাছি এবং অপেক্ষাকৃত কম উচ্চতা থেকে বিমানটি অবতরণ করার চেষ্টা করেন। যা খুব বিপদজনক। এছাড়াও ফিরে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও সেরকম কোন চেষ্টা দেখা যায়নি।” বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ার ও ক্রুদের যোগাযোগের সমস্যাকেও প্রতিবেদনে দায়ী করা হয়েছে।

ককপিটের ভয়েস রেকর্ডার থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, রানওয়ে ০২ নাকি ২০তে বিমানটি অবতরণ করবে, সেটি নিয়ে বিমান কর্মীদের এবং কন্ট্রোল টাওয়ারের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির তৈরি হয়েছিল।

এদিকে নেপালের বিমান চলাচলে নিরাপত্তার মান খুবই দুর্বল বলে মনে করা হয়। আর দুর্বল নিরাপত্তার কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আকাশসীমায় উড্ডয়নের অনুমতি নেই নেপালের এয়ারলাইন্সগুলোর।

অন্যদিকে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪ হাজার ৪০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। সেখানে উঁচু পাহাড়-পর্বত কারণে বিমান অবতরণের সময় খুবই সতর্ক থাকতে হয়। বিমান উড্ডয়নের সময়ও সর্তক দৃষ্টি রাখতে হয়।

২০১৮ সালের ১২ মার্চ সেখানে ইউএস-বাংলার বিমানটি শেষ মূহুর্তে অবতরণের গতিপথ পরিবর্তনের চেষ্টা করছিল। কিন্তু বিমানটি মাটিতে পড়ে যাওয়ার মাত্র ৬ সেকেন্ডের মধ্যে আগুন ধরে যায়। ফলে বেশির ভাগ বিমান আরোহি ওই আগুনেই পুড়ে মারা যান।

ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে এর আগেও একাধিকবার দুর্ঘটনা ঘটেছিল। সবথেকে ভয়াবহ ছিল ১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের বিমান দুর্ঘটনা। তাতে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের এক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন ১৬৭ জন। ওই দুঘর্টনার মাস দু‘য়েক আগে থাই এয়ারওয়েজের একটি বিমানও বিধ্বস্ত হয়ে ১১৩ জন মারা যান।

এমআরডি-২৮/০১/২০১৯