ম্যাচের আগেই দুই দলের সামনে সমীকরণ স্পষ্ট ছিল। হারলেই বিদায় নিশ্চিত। এমন কঠিন সমীকরণের ম্যাচে দাপুটে ক্রিকেট খেলেছে পাকিস্তান। ফিল্ডিং বাজে হলেও ব্যাটিং এবং বোলিং নৈপুণ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৪৯ রানে জয় পেয়েছে হারিস সোহলে ও মোহাম্মদ আমিররা। এই জয়ে ৬ ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার ক্ষীণ স্বপ্ন টিকে রাখল পাকিস্তান।
নিজেদের পরের তিন ম্যাচে নিউজিল্যান্ড, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় এবং দুর্দান্ত খেলে যাওয়া ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের কোনো একটি দল যদি টানা হেরে যায়, তাহলে সেমির ভাগ্য খুলেও যেতে পারে পাকিস্তানের। এর ব্যতিক্রম হলে শেষ চারের আগেই বাড়ি ফিরতে হবে সরফরাজদের।
রোববার, ২৩ জুন ইংল্যান্ডের লর্ডসে সেমিফাইনালে টিকে থাকার লড়াইয়ের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭ উইকেটে ৩০৮ রানের পাহাড় গড়ে পাকিস্তান। দলের হয়ে ৫৯ বলে ৮৯ রান করেন হারিস সোহেল। ৬৯ রান করেন বাবর আজম। ৪৪ রান করে করেন ফখর জামান ও ইমাম-উল-হক।
টার্গেট তাড়া করতে নেমে শাদাব খান ও মোহাম্মদ আমিরের তোপের মুখে পড়ে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ২৫৯/৯ রানেই ইনিংস গুটায় দক্ষিণ আফ্রিকা। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৭ রান করেন অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস। এছাড়া ৪৭ রান করেন কুইন্টন ডি কক।
পাকিস্তানের বিপক্ষে অস্তিত্বের লড়াইয়ের ম্যাচে ৩০৯ রানের পাহাড় ডিঙাতে নেমে মাত্র ৪ রানে হাশিম আমলার উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর দলকে খেলায় ফেরান কুইন্টন ডি কক ও ফাফ ডু প্লেসিস। দ্বিতীয় উইকেটে তারা ৮৭ রানের জুটি গড়েন।
ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা এই জুটি ভাঙেন লেগ স্পিনার শাদাব খান। ইমাম-উল-হকের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হয়ে সাজঘরে ফেরেন দক্ষিণ আফ্রিকান এ ওপেনার। তার আগে ৬০ বলে তিন চার ও দুই ছক্কায় ৪৭ রান করেন ডি কক।
এরপর চার নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নামা মার্ক ওরামকে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান শাদাব খান। তার বিদায়ের মধ্য দিয়ে ১০৩ রানে ৩ উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ইনিংসের শুরু থেকে দায়িত্বশীল ব্যাটিং করে যাওয়া ফাফ ডু প্লেসিসকে ক্যাচ তুলতে বাধ্য করেন মোহাম্মদ আমির। তার আগে ৭৯ বলে ৫টি চারের সাহায্যে ৬৩ রান করেন দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক।
পঞ্চম উইকেটে দলের হাল ধরেন ভেন দার ডুসেন ও ডেভিড মিলার। এই জুটিতে তারা ৫৩ রান যোগ করেন। এরপর মাত্র ২ রানের ব্যবধানে আউট হন ডুসেন ও মিলার। শাদাব খানের তৃতীয় শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরন ডুসেন। ৪৭ বলে ৩৬ রান করেন তিনি। ৩৭ বলে ৩১ রান করে শাহীন শাহ আফ্রিদির বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন মিলার কিলার। ইনিংসের শেষ দিকে ওয়াহাব রিয়াজের গতির মুখে পড়ে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পতনের কারণে পরাজয় এড়াতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা।
পাকিস্তান ৩০৮/৭
হারিস সোহেলের ব্যাটিং তাণ্ডব ও বাবর আজমের ফিফটিতে পাকিস্তানের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ৩০৮ রান। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের স্বপ্ন টিকে রাখতে হলে অসাধারণ বোলিংও করতে হবে মোহাম্মদ আমির, ওয়াহাব রিয়াজ ও শাদাব খানদের।
রোববার ইংল্যান্ডের লডর্সে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাঁচা-মরার লড়াইয়ের ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে দুরন্ত সূচনা করে পাকিস্তান। ইনিংসের প্রথম ১০ ওভারে ৫৮ রান যোগ করেন ইমাম-উল-হক ও ফখর জামান। উদ্বোধনী জুটিতে ১৪.৫ ওভারে ৮১ রান করেন তারা। ৫০ বলে ৬টি চার ও এক ছক্কায় ৪৪ রান করে আউট হন ফখর জামান।
এরপর মাত্র ১৭ রানের ব্যবধানে ফেরেন অন্য ওপেনার ইমাম-উল-হক। সাজঘরে ফেরার আগে ৫৮ বলে ৬টি চারে ৪৪ রান করেন ইমাম-উল। পাকিস্তানের এই দুই ওপেনারের উইকেট শিকার করেন দক্ষিণ আফ্রিকার মুসলিম ক্রিকেটার ইমরান তাহির। পাকিস্তানি বংশোদ্বোভূত ইমরান তাহিরের লেগ স্পিনে বিভ্রান্ত হয়ে ফেরেন পাকিস্তানের ইমাম-ফখর।
চার নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে বাবর আজমের সঙ্গে ৪৫ রানের জুটি গড়েন মোহাম্মদ হাফিজ। জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক মার্ক ওরামের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ৩৩ বলে ২০ রান করে সাজঘরে ফেরেন।
হাফিজের বিদায়ের পর হারিস সোহেলের সঙ্গে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৮১ রান যোগ করেন বাবর আজম।৬১তম বলে ওয়ানডে ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ১৪তম ফিফটি তুলে নেয়ার পর ইনিংসটা লম্বা করতে পারেননি বাবর। অ্যান্ডিল ফেহালুকাওয়ের বলে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে লুঙ্গি এনডিগির হাতে ক্যাচ তুলে দেন বাবর। তার আগে ৮০ বলে ৭টি চারের সাহায্যে ৬৯ রান করেন তিনি।
বাবর আজম আউট হলেও ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত ব্যাটিং তাণ্ডব চালিয়ে যান হারিস সোহেল। পঞ্চম উইকেটে ইমাদ ওয়াসিমের সঙ্গে ৭১ রানের জুটি গড়েন হারিস। ১৫ বলে ২৩ রান করে ইমাদ ওয়াসিম আউট হলেও উইকেটে অবিচল থেকে ব্যাটিং চালিয়ে যান হারিস সোহেল। তার অনবদ্য ব্যাটিংয়ে ৩০৮ রানের পাহাড় গড়ে পাকিস্তান। দলের হয়ে ৫৯ বলে ৯টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৮৯ রান করেন ইনিংস শেষ হওয়ার এক বল আগে আউট হন হারিস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান: ৫০ ওভারে ৩০৮/৭ (হারিস সোহেল ৮৯, বাবর আজম ৬৯, ফখর জামান ৪৪, ইমাম-উল-হক ৪৪, মোহাম্মদ হাফিজ ২০, ইমাদ ওয়াসিম ২৩; লুঙ্গি এনডিগি ৩/৬৪, ইমরান তাহির ২/৪১)।
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৫০ ওভারে ২৫৯/৯ (ফাফ ডু প্লেসিস ৬৩, ডি কক ৪৩; শাদাব ৩/৫০, ওয়াহাব ৩/৪৬, আমির ২/৪৯)।
ফল: পাকিস্তান ৪৯ রানে জয়ী।