যন্ত্রের মূল্য ৩৫ লাখ, রংপুর মেডিকেল কিনেছে ১ কোটি ৩৭ লাখে!

ইমমিনুসারি অ্যানালাইজার। যন্ত্রটির প্রকৃত বাজার মূল্য মাত্র ২০ লাখ টাকা। তবে টেন্ডারে ক্রয়মূল্য দেখানো হয়েছে ১ কোটি টাকা। ভিডিও অ্যান্ডোসকোপ মেশিনের টেন্ডারে ক্রয়মূল্য দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। অথচ এর প্রকৃত বাজার মূল্য মাত্র ৩৫ লাখ টাকা। ওই যন্ত্র দুটির মতো আরো অনেক যন্ত্র কেনা হয়েছে রংপুরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য। আর যন্ত্রগুলো কিনতে বাজার মূল্যের চেয়ে টেন্ডারে এসবের মূ্ল্য দেখানো হয়েছে কয়েকগুন বেশি।

কেনাকাটায় দুর্নীতির এ অভিযোগ ওঠার পর টেন্ডার কমিটির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। জাতীয় দৈনিক যুগান্তর অনলাইনের এক খবরে রোববার, ২২ জুন এসব তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।  

তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. কান্তা রায় রিমিকে কন্ডাক্টিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাকে দ্রুত স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন) বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।

সচেতন নাগরিক সমাজের সভাপতি অধ্যাপক একেএম হাবিবুল্লাহর অভিযোগের ভিত্তিতে এ তদন্ত শুরু হয়েছে।

প্রকাশিত খবরে বলা হয়, রংপুর মেডিকেল কলেজের ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের জন্য যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য উপকরণ কিনতে প্রায় ৫ কোটি টাকার উপকরণ দরপত্র আহবান করা হয়। যোগসাজসের মাধ্যমে দরপত্রে প্রতিটি পণ্যের মূল্য ৪ থেকে ৫ গুণ বাড়িয়ে প্রায় ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা অতিরিক্ত বিল দেয়া হয়।

টেন্ডারে অংশগ্রহণকারী ৩টি কোম্পানির মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিকেল কোম্পানিকে কার্যাদেশ দেয়া হয়।

অভিযোগে বলা হয়, দরপত্রে কাটাকাটি করে বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিকেল কোম্পানিকে সর্বনিম্ন দরদাতা বানানো হয়েছে।

টেন্ডারে জেনারেল কোম্পানির ২ টন ক্ষমতা সম্পন্ন ৩২টি এসি কেনা হয়েছে। প্রতিটির মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। অথচ প্রতিটির প্রকৃত বাজার মূল্য ৯০ হাজার টাকা।

এছাড়া ইমমিনুসারি অ্যানালাইজার টেন্ডারে ক্রয়মূল্য এক কোটি টাকা, প্রকৃত বাজার মূল্য ২০ লাখ টাকা, বায়োকেমিস্ট্রি অ্যানালাইজার টেন্ডারে ক্রয়মূল্য ৩ লাখ ৬৭ হাজার টাকা, প্রকৃত বাজার মূল্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। ডায়েটারমাই মেশিন টেন্ডারে ক্রয়মূল্য ২৫ লাখ টাকা, কিন্ত প্রকৃত বাজার মূল্য ১০ লাখ টাকা। ভিডিও অ্যান্ডোসকোপ টেন্ডারে ক্রয়মূল্য এক কোটি ৩৭ লাখ টাকা, এর প্রকৃত বাজার মূল্য ৩৫ লাখ টাকা। আলট্রাসাউন্ড মেশিন ফর সাইথেরাপি টেন্ডারে ক্রয়মূল্য ১৪ লাখ ৬৬ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্ত প্রকৃত বাজার মূল্য ৪ লাখ টাকা।

শর্ট ওয়েভ ফর সাইথেরাপি টেন্ডারে ক্রয় ৬১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। কিন্ত প্রকৃত বাজার মূল্য ১২ লাখ টাকা। বায়োলজিকেল মাইক্রোস্কোপ টেন্ডারে ক্রয়মূল্য এক লাখ ৫৫ হাজার টাকা প্রকৃত বাজার মূল্য ৫৫ হাজার টাকা। ইলেকট্রলেট অ্যানালাইজার টেন্ডারে ক্রয়মূল্য ৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা, প্রকৃত বাজার মূল্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এতে মোট ২ কোটি ৬৬ লাখ ৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ নূর ইসলাম তদন্তের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘তদন্তের অংশ হিসাবে কন্ডাক্টিং অফিসার অধ্যাপক ডা. কান্তা রায় রিমি প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত সরবরাহ করতে লিখিতভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন।’

দরপত্রের মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে সচেতন নাগরিক সমাজের সভাপতি অধ্যাপক মো. এ.কে.এম হাবিবুল্লাহ অভিযোগ আকারে একটি আবেদনপত্র স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন) বরাবর দাখিল করেন। এরই প্রেক্ষিতে গত ২৬ মে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. কান্তা রায় রিমিকে কন্ডাক্টিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।

ডা. কান্তা রায় রিমি বলেন, দরপত্র কমিটির কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে। তারা অল্প সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রদান করবেন।

তবে রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নূর ইসলাম টেন্ডারে কোনো অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, নিয়ম মেনে টেন্ডারের মাধ্যমে উপকরণ কেনা হয়েছে।

মূল্য যাচাই কমিটির আহবায়ক ডা. হৃদয় রঞ্জন রায় বলেন, রংপুর এবং ঢাকার বাজার যাচাই করে তারা যন্ত্রপাতিগুলোর প্রকৃত সম্ভাব্য মূল্য নির্ধারণ করে টেন্ডার কমিটির কাছে জমা দিয়েছেন। কিন্তু তাদের প্রদত্ত ক্রয়মূল্য আর টেন্ডারের ক্রয় মূল্য এক কি না সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন।

টেন্ডার কমিটির সদস্য রংপুরের সিভিল সার্জন জাকিরুল ইসলাম লেলিন সংবাদমাধ্যমটিকে জানান, টেন্ডার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাবের কারণে তিনি সেখানে যাননি। টেন্ডার কমিটির অপর একজন সদস্য জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি সহকারী কমিশনার অতীশ দশী চাকমাকে টেন্ডার সম্পর্কে কোনো কিছু না জানানোর কারণে তিনি কোনো কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেননি।

এইচএ/রাতদিন