নীলফামারীর সৈয়দপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে আইনশৃংখলা রক্ষাকারীবাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে জিম্মি করার ঘটনা ঘটেছে। এসব ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করা হয়। নগদ ও বিকাশে প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা হাতিয়েও নেয় প্রতারক চক্রের সদস্যরা।
গত শনিবার, ৭ জুন রাতে নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের মুন্সীপাড়া খেঁজুরবাগ মসজিদ এলাকা থেকে এই প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে আটক আটক করা হয়।
এরা হলেন, নীলফামারী সদরের বাবরীঝাঁড় চৌপথীবাজারের মিঠু হোসেনের ছেলে লিমন হোসেন (২২), লিমন হোসেনের স্ত্রী আকতারা বেগম (২১) এবং সৈয়দপুর শহরের আতিয়ার কলোনী এলাকার মৃত. অধ্যাপক মোসলেম উদ্দিনের ছেলে মো. আবু বিন আজাদ ওরফে শাওন (৩৫)।
এ ঘটনায় আব্দুর রহিম নিজে বাদী হয়ে সাতজনকে আসামী করে সৈয়দপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
থানায় করা মামলার আরজি থেকে জানা যায়, রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার পাইকান হাজীপাড়ার মৃত জসিম উদ্দিনের ছেলে আব্দুর রহিম (৫০)। ঘটনার দিন গতকাল শনিবার সকাল আনুমানিক ১০ টার সময় তিনি ব্যক্তিগত কাজে সৈয়দপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে আসেন। এ সময় প্রতারক চক্রের তিন সদস্য নিজেদের আইনশৃংখলাবাহিনীর (পুলিশ) সদস্য পরিচয় দিয়ে তাকে আটক করে। তাকে বলা হয় তারা গোপন সূত্রে পুলিশ জানতে পেয়েছে যে তাঁর কাছে ইয়াবা রয়েছে।
পরে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে একটি রিকশায় করে কৌশলে সৈয়দপুর শহরের মুন্সিপাড়া খেজুরবাগ এলাকায় জনৈক আবু বিন আজাদ ওরফে শাওনের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। তবে ওই বাসায় আগেই থেকে প্রতারক চক্রের কয়েক সদস্য উপস্থিত ছিলেন। আব্দুর রহিমকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর এলোপাতারি মারপিট করে জখম করে তারা (প্রতারক)।
এসময় ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে (আব্দুল রহিম) পরণের সকল কাপড়চোপড় খুলে সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে। এরপর প্রতারক চক্রটি তাদের নারী সদস্য আকতারা বেগমের সঙ্গে আব্দুর রহিমকে জড়িয়ে ধরে মোবাইল ফোনে অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে। পরবর্তীতে ওই ধারণকৃত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে আব্দুল রহিমের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। আব্দুর রহিম নিজের জীবন ও মান সম্মান বাঁচাতে এক লাখ টাকা দিতে রাজী হয়।
রহিম তাঁর স্ত্রী ও নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে প্রতারক চক্রের ০১৭১৭-৬৩৫১৫৩ নম্বর মুঠোফোনের বিকাশ নম্বরে তিন দফায় ২০ হাজার টাকা দেয়। আর অবশিষ্ট টাকা সংগ্রহ করে দেওয়ার শর্তে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে আব্দুল রহিম ছেড়ে দেয় প্রতারক চক্রের সদস্যরা।
সেখান থেকে ছাড়া পেয়েই আব্দুর রহিম সরাসরি সৈয়দপুর থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে ঘটনাটি অবগত করেন। ঘটনা জানার পরপরই সৈয়দপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাহিদুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ দ্রæত ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে হাতেনাতে আটক করেন।
আটকৃতরা ছাড়াও এ মামলার অন্যা আসামীরা হচ্ছে, রংপুর বাস টার্মিনালের শ্যামল রায় (৪০) ও তার স্ত্রী বীনা রাণী (৩৫), ঘাঘটপাড়ার নাজির (২২) এবং সেনপাড়ার আরমান (২৮)।
সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল হাসনাত বলেন, ঘটনার বিষয়ে অবগত হয়ে দ্রুত পুলিশী তৎপরতায় প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে আটক করতে সক্ষম হই। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলাটি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ মামলার এজাহারভূক্ত অন্য আসামীদেরও গ্রেপ্তারের জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।