বিরামহীন আর্তনাদ। তার সাথে যুক্ত হয়েছে কচি কণ্ঠের চিৎকার-চেঁচামেচি। পরিত্যক্ত একটি সেফটিক ট্যাঙ্ককে ঘিরে রেখেছে কয়েকটি কুকুর। সমস্বরে যেন ডুঁকরে কাঁদছিল সকলেই।
নীলফামারীর সৈয়দপুর থানা ভবনের পেছনে। গত শনিবার, ৫ জানুয়ারির ঘটনা এটি।
উচ্চ স্বরের এ আর্তনাদ দু’দিন থেকে ভেসে বেড়াচ্ছিল পুরো থানা চত্বর জুড়ে। ছড়িয়েছিল আশপাশের এলাকাতেও। কানে এসে লাগলেও এটিকে স্বাভাবিক হিসেবেই ধরে নিয়েছিলেন পুলিশ সদস্যরা ও আশপাশের লোকজন।
তবে শেষ পর্যন্ত একজন শাহজাহান পাশা নিজেই বেরিয়ে পড়েন কারণ অনুসন্ধানে, সোমবার, ৭ জানুয়ারি।
তাঁর ভবনের পেছনে গিয়ে দেখেন জটলা। একদল কুকুরের। তাড়ানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ট্যাঙ্কের মুখ ঘিরে রাখা প্রাণীগুলো সরছে না। উল্টো তাঁর উপরই হামলে পড়তে চাচ্ছিল। এরপরও হাল ছাড়েননি।
ভিডিওতে দমকল বাহিনীর উদ্ধার অভিযান
অনেক চেষ্টা করে পৌঁছান সেখানে। দেখেন, সেফটিক ট্যাঙ্কের মুখ খোলা। ভেতরে কি আছে তা দেখা যাচ্ছিল না। তবে একাধিক কুকুর ছানার কান্নার শব্দ ভেসে আসছিল সেখান থেকে। বুঝে যান, সেগুলো সেখানে পড়ে গিয়ে উপরে উঠে আসতে পারছে না। তাই কেঁদে চলেছে। উপরে আবার তাদের মা ও তার স্বজাতিরা ছানাগুলোকে বাঁচানোর আঁকুতি জানাচ্ছিল।
বিষয়টি ভীষণভাবে নাড়া দেয় শাহজাহান পাশাকে। ফলে নিজেই চেষ্টা করেন ছানাগুলো উদ্ধারের। তবে ব্যর্থ হন। তাঁর সহকর্মীরাও উদ্ধারে যোগ দিয়ে হন ব্যর্থ ।
খবর দেয়া হয় দমকল বাহিনীকে। ছুঁটে আসেন তাদের একটি দল। পরে তাদেরই এক কর্মী ট্যাঙ্কের ভেতরে নেমে পড়েন। এরপর একে একে বের করে আনেন তিন তিনটি কুকুর ছানা। মা তার সন্তানদের পরম মমতায় আদর করতে শুরু করে।
এ দৃশ্য দেখে পুলিশ-দমকল বাহিনীর সবাই হয়ে পড়েন আবেগ আপ্লুত । তখন ছলছল করছিল শাহজাহান পাশার দুটি চোখ। তিনি সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি)। থানার একাধিক পুলিশ সদস্য, দমকল বাহিনী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।
জানা গেছে, কুকুর ছানা ও তাদের মায়ের আঁকুতিতে সাড়া দিয়ে মানবিকতার দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করা একজন ওসির এ উদ্যোগের কথা ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই তাকে সাধুবাদ জানান। অভিনন্দন জানান সৈয়দপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার পাল। তাঁকে সৈয়দপুর বণিক সমিতির সভাপতি মো. ইদ্রিস আলীসহ অনেকেই জানিয়েছেন ধন্যবাদ। দমকল বাহিনীকেও অভিনন্দন জানাচ্ছেন স্থানীয়দের অনেকে।
মঙ্গলবার, ৮ জানুয়ারি রাতে ওসি শাহজাহান পাশার সাথে কথা হয় রাতদিন.নিউজের। তিনি বলেন, ‘কাছে থেকেও মা-সন্তান যেন ছিল যোজন যোজন মাইল দূরে। মা তার সন্তানের কষ্ট দেখছিল কিন্তু কিছুই করার ছিল না। এ দৃশ্য দেখে আবেগতাড়িত হয়ে পড়ি। তাই মানুষ হিসেবে তাদের পুনরায় মিলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছি মাত্র’।
অপরদিকে সৈয়দপুর দমকল বাহিনীর সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. মাহমুদুল হাসান বলছিলেন, ‘সেফটিক ট্যাঙ্কে আটকে দুদিন ধরে মায়ের দুধ খেতে পারেনি বাচ্চাগুলো। তাই খবর পেয়ে আমাদের কর্মীরা তাদের উদ্ধার করেছে। সেগুলো এখন সুস্থ আছে’।
এইচএ/০৮.০১.০৯