লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত হোসেনের কবর উদ্ধারের পর সংরক্ষনের জন্য জমি দানপত্র করে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন দুই ভাই-বোন। বিক্রয় হয়ে যাওয়া ওই জমিতে ২৪ বছর আগে তাকে সমাহিত করা হয়।
দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী ওই দুই ভাই-বোন হলেন, উপজেলার পূর্ব বেজগ্রাম এলাকার মৃত মফিকুল ইসলামের পুত্র ও উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তৌফিকুল ইসলাম তপু ও তার বোন মেহেনাজ পারভীন মিম। মিম কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, উপজেলার কেতকীবাড়ি এলাকায় স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বসবাস করতেন মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত হোসেন। ভ্যান চালানো রোজগার দিয়ে সংসার চলতো তার। প্রায় ২৪ বছর আগে তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। তার নিজস্ব কোন জমি না থাকায় ওই এলাকার জনৈক মফিকুল ইসলামের পরিত্যাক্ত জমিতে ওই্ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সমাহিত করা হয়।
যদিও সে সময় তাকে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি এ ঘটনায় সেসময় থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্ত শেষে পরিবাবের নিকট হস্তান্তর করেন।
এরই মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত হোসেনের কবর নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। অন্যদিকে কবরের কোন চিহ্ন না থাকা ও উত্তরসূরীরা বিষয়টি অবগত না হওয়ায় জমিটি বিক্রয় করে দেয়।
পরবর্তীতে জমির উত্তরসূরী মফিকুল ইসলামের পুত্র তৌফিকুল ইসলাম তপু ও কন্যা মেহেনাজ পারভীন মিম বিষয়টি জানতে পেরে নিহত মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে ডেকে জমিটি দানপত্র করে দেন।
মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী রাবেয়া বেগম জানান, নিজস্ব কোন জমি না থাকায় অন্যের জমিতে তাকে দাফন করা হয়। পরে তপু ও মিম বিষয়টি জানতে পেরে আমাদের ডেকে জমিটি দানপত্র করে দিয়েছেন।
তৌফিকুল ইসলাম তপু বলেন, ওই জমিতে বীর মুক্তিযোদ্ধার কবর রয়েছে জানতে পেরে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড আহবায়ক রোকনুজ্জামান সোহেল ভাইয়ের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে জমিটি দানপত্র করে দেই।
মেহেনাজ পারভীন মিম বলেন, আজ ওনাদের জন্যই একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়ে বেঁচে আছি। আর তাদেরই একজন আমার জমিতে চীর নিদ্রায় শায়িত আছেন। আগে জানলে আমি অনেক আগেই কবর সংরক্ষণের জন্য ওই জমি দিয়ে দিতাম।
হাতীবান্ধা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড আহবায়ক রোকনুজ্জামান সোহেল বলেন, দ্রুত সকল মৃত মুক্তিযোদ্ধার কবর কোথায় আছে, কি অবস্থায় আছে, তা অনুসন্ধান করার দাবি করছি। মিম ও তপু যে দৃষ্টান্ত রেখেছে তা নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে আসতে অণুপ্রেরনা যোগাবে।
হাতীবান্ধা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার ফজলুল হক বলেন, ‘আমি চাই এই সরকার মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের কবর সংরক্ষণে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবেন।
হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সামিউল আমিন বলেন, যারা প্রয়াত বীরমুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত হোসেনের কবর সংরক্ষনে জমি দান করেছেন, উপজেলা প্রসাশনের পক্ষ থেকে তাদেরকে কৃতজ্ঞতা জানাই।
জেএম/রাতদিন