হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়া প্রসুতির গাছতলায় সন্তান প্রসব!

শুক্রবার গভীর রাতে প্রসব বেদনা উঠে রীনা বেগমের। বছর ত্রিশের ওই নারীকে শনিবার, ১৯ জানুয়ারি সকালে পরিবারের লোকজন নিয়ে আসেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে ভর্তিও করা হয়।

তবে দুপুরে হাসপাতালের মিডওয়াইফ নার্স সাবানা বেগম জানতে পারেন ওই প্রসুতির প্রথম সন্তানের জন্ম হয়েছিল অস্ত্রপচারের মাধ্যমে।

বিষয়টি জানার সাথে সাথেই রীনাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। নার্স পরামর্শ দেন তাকে পঞ্চগড় বা ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার।

সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে প্রসূতির স্বামী জাহিদুল ইসলাম টাকা ও গাড়ির ব্যবস্থা করতে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যান। কিন্তু স্বামী ফিরে আসার আগেই হাসপাতাল থেকে রীনাকে বের হয়ে যেতে বাধ্য করে ওই নার্স।

এই গাছতলার নিচে সন্তান প্রসব করেন রীনা বেগম। ছবি : রাতদিন.নিউজ

বাধ্য হয়ে ননদ রেজিনাকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে সামনের একটি গাছের নিচে আশ্রয় নেন। কিছুক্ষণ পর সেখানেই একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন তিনি।

বিষয়টি দেখতে পেয়ে হাসপাতলের পরিচ্ছন্ন কর্মী সোহাগী নবজাতক ও তার মাকে আবারও হাসপাতালের ভেতরে নিয়ে যান।

ঘটনাটি জানাজানি হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে স্থানীয়রা। খবর পেয়ে ছুটে আসেন ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. আফরোজা বেগম ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

এ ঘটনা ঘটেছে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ওই প্রসুতির বাড়ি উপজেলার সাকোয়া ইউনিয়নের বালাভিড় গোয়ালপাড়া গ্রামে।

রীনা বেগম অভিযোগ করেন, ‘ছাড়পত্র দেওয়ার পর স্বামীর জন্য অপেক্ষা করছিলাম এমন সময় নার্স সাবানা আমাকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেন। বাধ্য হয়ে গাছের নিচে সন্তান প্রসব করি’।

তার স্বামী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চাই এ ঘটনার বিচার হোক’।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে নার্স সাবানা বেগম বলেন, ‘রোগীর অবস্থা বিবেচনা করে আমি তাদের অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম’।

নার্স সাবানা বেগমকে শোকজ করা হয়েছে জানিয়ে বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এসআইএম রাজিউল করিম রাজু বলেন, ‘স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. জাহিদ হাসানকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে’।

এদিকে শনিবার সন্ধ্যার দিকে রীনা ও নবজাতককে পরিবারের লোকজন বাড়ি নিয়ে গেছে। রাতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দু’জনেরই শারীরিক অবস্থা ভালো রয়েছে।

এইচএ/১৯.০১.১৯