মানুষ মরণশীল। তাই মৃত্যুর পর তাকে সমাহিত করতে হবে-এমন বিধান রয়েছে প্রায় সব ধর্মেই। কিন্তু আজব এক রীতি চালু রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার পাঙ্গালায়। সেখানে মৃতদেহের সঙ্গে বসবাস করেন স্বজনরা। শুধু তা-ই নয়, মৃত দেহকে গোসল করানো, পোশাক পরানো, এমনকি খাওয়ানোও হয়। অবাক হলেও ঘটনাটি সত্য।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইন্দোনেশিয়ার পাঙ্গালায় তোরাজা সম্প্রদায় যুগ যুগ ধরে এমন রীতিই মেনে আসছেন।
ইন্দোনেশিয়ার বালি থেকে ১৮০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে দক্ষিণ সুলায়েসির পাঙ্গালায় তোরাজা সম্প্রদায়ের বাস। এরা মূলত খ্রিষ্টান।
জন্মের পর থেকেই তারা বিশ্বাস করেন যে, মৃত্যু মানে জীবনের শেষ নয় বরং জীবনযাত্রার একটি অংশ। মৃত্যু মানেই আত্মার দেহ ত্যাগ নয়। মৃত্যু মানে তিনি জীবিত কিন্তু ভীষণ অসুস্থ। তাই হাঁটাচলা, খাওয়া এমনকি কথা বলতে পারেন না। এজন্য এ সম্প্রদায়ের কোন আত্মীয়ের মৃত্যু হলে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার বদলে তার বিশেষ যত্ন নেয়া হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় তাই তারা কফিনের মধ্যে প্রিয়জনের মৃতদেহ রেখে দেন। প্রতিদিন সময় করে পানি, খাবার এমনকি সিগারেটও খেতে দেয়া হয়। তারা পুরো দেহ পরিষ্কার করে নতুন পোশাক পরান। প্রিয়জনরা যাতে মনে না করেন যে, তাদের প্রতি অবহেলা করা হচ্ছে। তারা সময়মতো কফিনের ঢাকনা খুলে প্রিয়জনের সঙ্গে গল্পও করেন।
এভাবে তারা এক সপ্তাহ, একমাস বা এক বছর প্রিয়জনকে নিজের কাছে রেখে দেন। সামর্থ অনুযায়ী যত দিন ইচ্ছা নিজের কাছে মৃতদেহ রেখে দেন। কারণ মৃতদেহ ভালোভাবে সংরক্ষণ না করলে পচে যাবে। আর সেটা অনেক ব্যয়সাপেক্ষ। এর জন্য বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক দরকার হয়। এরপর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হয়।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া:
তোরাজারা বিশ্বাস করে, মৃত্যুর পর মহিষই তাদের স্বর্গের রাস্তা দেখায়। তাই একজন মৃত ব্যক্তির জন্য অন্তত একটি মহিষ বলি দেয়া বাধ্যতামূলক। একটি মধ্যবিত্ত পরিবার একজনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় ২৪টি মহিষ বলি দেয়। সামর্থ থাকলে বলির সংখ্যা বাড়তে পারে।
তাদের কাছে প্রথম বলি দেয়া মহিষ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করা মানে প্রিয়জনের মৃত্যু। এরপর যত বেশি মহিষ বলি দেয়া হবে, তত তাড়াতাড়ি আত্মা স্বর্গে পৌঁছে যাবে। যাদের অনেক মহিষ কেনার সামর্থ নেই, তারা একটি মহিষই বলি দেয়। তবে এতে ওই ব্যক্তির মৃত্যু নিশ্চিত হলেও তার আত্মা স্বর্গে পৌঁছতে না পারার সম্ভাবনা রয়েছে।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পর মৃতদেহসহ কফিন নির্দিষ্ট কোন গুহায় রেখে দেয়া হয়। পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় অনেক গুহা রয়েছে সেখানে। কিন্তু তারপরও বছরে একবার আত্মীয়রা সেই গুহার কাছে যান। কফিন থেকে মৃতদেহ তুলে পরিষ্কার করে নতুন পোশাক পরান, খাওয়ান। তাদের বিশ্বাস, মৃতদের প্রতি সম্মান জানালে তাদের আয়ু বাড়বে এবং সৌভাগ্য অর্জিত হবে।
এনএইচ/রাতদিন