জাকারিয়া বিন হক শুভ। ছোটবেলা থেকেই চোখের সামনে বেড়ে উঠা। তার সৃজনশীলতা, বিনয়, ভদ্রতা- শিষ্টাচার ও শুভচিন্তাশক্তি তার নামের যথাযথ স্বার্থকতা মূল্যায়ন করেছিল। ‘করেছিল’ শব্দটি এজন্যই ব্যবহার করছি, কারণ সেই ক্ষণজন্মা প্রিয় ছেলেটি আর আমাদের মাঝে নেই। সবাইকে অশ্রুসিক্ত করে চলে গেছে না ফেরার দেশে।
শুভকে নিয়ে লিখতে গিয়ে আমার হৃদয় বারবার কষ্টে ভারাক্রান্ত হচ্ছে। আমাদের সম্পর্কটা কাকা-ভাতিজা। পরিবারের কনিষ্ঠতম সদস্য এবং পারিবারিক সম্পর্কের সাথে জড়িয়ে আত্মার-বন্ধনে আবদ্ধ, এ যেন নিজের সন্তানের থেকে কোনো অংশে কম নয়। তার সৃজনশীল কর্মকান্ড ও সুগঠিত সমন্বয়সাধন আমাদের সম্পর্ককে আরও গভীরতা দান করেছিল।
কালীগঞ্জের মাটিতে তার একটি অন্যতম উদ্যোগ ও সমন্বয়ভূমিকা সম্পর্কে না বললেই নয়, তার একান্তিক প্রচেষ্টা ও অনুপ্রেরণায় তুষভান্ডার আরএমএমপি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৫০বছর পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এ উপলক্ষে সৃজনশীল আলোচনার জন্য সে আমার কাছে বারবার ছুটে এসেছিল।
শুভ এমন একটি ছেলে তার কথা বলতে গেলে বারবার তার গুণের কথাই বলতে হয়। সে ছিল একাধারে একজন ভালো বির্তাকিক, উপস্থাপক, মোটিভেশনাল, সাংস্কৃতিককর্মী এবং একজন দক্ষ সমন্বয়ক। তাই কালীগঞ্জের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নিশ্চিতভাবে রেখেছিল উজ্জল দৃষ্টান্ত ।
শুধু নিজ এলাকায় নয়, তার বাচনভঙ্গি, উপস্থাপনা ও উত্তম নেতৃত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব-বলয়ে স্থান করে নিয়েছিল।
শুভর মৃত্যুর কথা শোনার পর একটা স্মৃতিপট আমার চোখের সামনে বারবার ভেসে উঠছে। বিষয়টি না বলে আর পারছি না। অবশ্য এটাও তার আরেকটা গুনেরই কথা। তার বিনয়ী-মনন অজান্তেই আমার হৃদয়ে একটা জায়গা তৈরি করে রেখেছে । তার সাথে যখনি আমার দেখা হত সে বিনয়াবনতভাবে মাথা নিচু করে হাত দুটো নুইয়ে এবং নতজানু হয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করত, যা আমি তার মত আর কোনো অনুজদের কাছ থেকে এভাবে পাইনি। এছাড়াও কোনো প্রয়োজনে তাকে মেসেঞ্জার বা ফোনে নক করলেই ওপাশ থেকে বিনম্রসুরে তার উত্তর পেতাম ‘জ্বি কাকা’।
শুভর সেই সম্বোধন আমার কানে আজও অবিরত ধ্বনিত হয়। শুভ যে আর পৃথিবীতে নেই সেটা আমার মন কখনই মানতে চায়না। কালোলিপির প্রতাবর্তন ঘটবে, চিরায়িত নিয়মে শুভকে আর দেখতে পাবো না, আমাকে আর কাকা বলে ডাকবে না কিন্তু তার স্মৃতি বেচেঁ থাকবে আমার হৃদয়ের-মঞ্জিলে।
এমন একজন মানুষ আত্মহননের মত একটি ঘৃণিত কাজ করতে পারে এটা পৃথিবীর সবাই বিশ্বাস করলেও আমি করি না। করতে পারছি না। কোনওদিনও করবো না।
শুভ তুমি যেখানেই থাকো, ভালো থেকো। সৃষ্টিকর্তা তোমাকে ভালো রাখুন।
লেখক: দেবদাস রায় বাবুল, জাকারিয়া বিন হক শুভর প্রতিবেশি এবং স্বত্ত্বাধিকারী, যতীন অ্যান্ড সন্স, তুষভান্ডার বাজার, কালীগঞ্জ, লালমনিরহাট।